কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি
কোমর ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা
প্রথমেয় কিছু সতর্কতার ব্যাপারে জেনে নিন।
বসে থাকাঃ- আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নিবেন না। সামনে ঝুঁকে কাজ বসবেন না।কোমরের পেছনে সাপোর্ট প্রয়োজন আছে। নরম বা স্প্রিংযুক্ত সোফা চেয়ারে বসবেন না। চেয়ারে বসার সময় একটা বিষয় লক্ষ রাখবেন আপনার মেরুদন্ড যেনো সোজা থাকে। বাকা হয়ে চেয়ারে বসা উচিত নয় মানে এবং অধিক সময় হেলান দেওয়া এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
দাড়িয়ে থাকাঃ- ১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না।
দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল-জুতা পরবেন না। অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট করুন। হতে পারে এটা আপনার কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথার কারণ।
ঘুমের সময়ঃ- উপুড় হয়ে শুবেন না। ভাঙ্গা খাট, ফোম বা স্প্রিংয়ের খাটে না শোয়াই ভাল। সমান তোশক ব্যবহার করুন। বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে। শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়।
কোনো কিছু বহন করার সময়ঃ- ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না। ভারি জিনিস মাথায় নিলে অবশ্যই সোজা হয়ে হাটার চেষ্টা করবেন। পিঠের ওপর ভারি কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন।
মাটি থেকে কিছু তোলার সময়ঃ- কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না, হাঁটু ভাঁজ করে তুলবেন।
কোমর ব্যথা বেশি হলে বিছানায় শোয়া ও ওঠার নিয়মঃ- চিত হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাঁজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন এবং হাতের উপর ভরকরে বসুন এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন এবং পা দু’টি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন। দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন। এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান।
মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন
অল্প উচু জুতো বা স্যান্ডেল পরুন। সবসময় একই উচ্চতার জুতা বা হিল করার অভ্যাস করুন। তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদন্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখার চেষ্টা করুন। কোমর ঝুঁকে বাচ্চাকে কোলে নেবেন না। ঝাড়ু দেয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন। মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন। বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা ভাল।
কোমর ব্যথার কারণ
সাধারণত দেখা যায় মেরুদণ্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।
চলাফেরা, খুব বেশি ভার বা ওজন তোলা, মেরুদণ্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাড়িয়ে কোন কাজ করা, মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া, সর্বোপরি কোমরের অবস্থানগত ভুলের জন্য এ ব্যথা হয়ে থাকে।
কোমর ব্যথার কিছু অন্যতম কারণঃ-
বয়সজনিত মেরুদণ্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্র্যাটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরেসিস, এনকাইলজিং স্পনডাইলাইটিস, মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা, টিউমার, ক্যান্সার, বোন টিবি, কোমরের মাংসে সমস্যা,বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুড়ি, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
কোমর ব্যথার লক্ষণ
নড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যথা তীব্র অনুভব হতে পারে। ব্যথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যথা মেরুদণ্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে।
অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা। ব্যথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন-ঝিন জাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশীর ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আধুনিক এই যুগেও কোমর ব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
কোমর ব্যথার প্রতিকার
ফিজিওথরাপি কি
কোমর ব্যথাজনিত সমস্যার অত্যাধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। এই চিকিৎসাব্যবস্থায় চিকিৎসক রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, লাম্বার ট্রাকশন শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, অতিলোহিত রশ্মি, ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি, ইনফারেড রেডিয়েশন, ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক নার্ভ ইস্টিমুলেটর, ইলেকট্রিক নার্ভ ও মাসেল ইস্টিমুলেটর, অটো মেনুয়াল ট্রাকশন, হাইড্রোথেরাপি, লেজার থেরাপি ও বিভিন্ন প্রকার ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
ফার্মাকোথেরাপি কি
চিকিৎসকেরা রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সাধারণত ব্যথা-নাশক (এন-এস-এ-আইডি-এস) গ্রুপের ওষুধ, মাসল রিলাক্সজেন ও সেডেটিভজ জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।
যেহেতু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে সেজন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া উচিত।
মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারি
যদি দীর্ঘদিন ফার্মাকোথেরাপি ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হলে রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারির করনোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। সার্জারির পরবর্তীতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট ব্যায়াম দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতেও বলা হয়।
কোমর ব্যথার খাবার
গরুর মাংস, খাসির মাংস, ডাল জাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে আনুন এবং শাকসবজি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তারা দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং রাত্রিবেলায় একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন।
কোমর ব্যথায় ব্যায়াম
কোমরে ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। সঠিকভাবে হাঁটাচলা বা ওঠা-বসা করলে কোমর ব্যথা সাধারণত হয় না। কিছু ব্যায়াম কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়।
এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। সময় লাগবে সর্বোচ্চ সাত-আট মিনিট।
সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। এরপর হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যত দূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত পা তুলে রাখতে পারেন। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন। এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলতে হবে এবং একই সময় নিন।
এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এভাবে ১০ সেকেন্ড পার করতে হবে। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে এবং একই সময় পার করুন। এবার একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুহাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে।
সর্বশেষ ধাপটি হলো দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে। প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করে দু-তিনবার সকাল-রাতে করতে হবে। যা কোমরের মাংসপেশির প্রদাহ কমায় ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে কোমরে ব্যথা কমে আসে।
কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকেই। হাড়ের ক্ষয়, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ক্যালসিয়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। কোমরে ব্যথায় এই ঘরোয়া টোটকাগুলি ব্যবহার করলে, ফল পাবেন ম্যাজিকের মতো।
কোমর ব্যথার খাবার
মেথি বীজঃ- মেথি বীজের গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ব্যথার জায়গায় এই মিশ্রণ লাগালে উপকার পাবেন। যেকোনো বাণিয়া দোকান বা বড় মুদি দোকানে এটা পাওয়া যায়।
লেবুর শরবতঃ- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী।
অ্যালোভেরাঃ- প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্যঃ- প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, চিজ, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
গরম সেঁক দিনঃ- কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
আদাঃ- আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়মিত আদা খেলে কোমরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
হলুদঃ- দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে।
রসুনঃ- প্রতিবার খাবারের সাথে এক থেকে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। আমরা সবাই জানি যে রচনা একটি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক। এটা আপনার সমস্ত ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।