মধু ও রসুন এর উপকারিতা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের দেশের খাবারে যেসব মশলার উপকরণ ব্যবহার করা হয়, রসুন তার মধ্যে অন্যতম। রান্নার উপকরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও রসুনের জুড়ি নেই। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum)। রসুন খুবই পুষ্টিকর, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ১৭ টি এমাইনো এসিড ময়শ্চার, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।
ভিটামিন ও মিনারেলের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, এবং আয়োডিন, সালফার এবং ফ্লোরিনও আছে অল্প পরিমাণে। রসুন স্বাস্থ্যের জন্য কত উপকারী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই কারণে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি রসুনকে ‘বিস্ময়কর ওষুধ’ নামে অভিহিত করেছেন। কিন্তু কেন? আসুন জেনে নেয়া যাক সেই ব্যাপারটিই।
- ব্রণ সমস্যা দূরে রাখে।
- ক্ষুধামন্দা ভাব দূর করে।
- আঁচিলের সমস্যা সমাধান করে।
- উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দূর করে।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- গিঁট বাতের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
- যক্ষ্মা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
- পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দূর করে।
- চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
- ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
- হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
- শিরা উপশিরায় জমাট বাঁধা রক্ত ছাড়াতে সহায়তা করে।
- ফ্লু এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- দেহের বিভিন্ন অংশের পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ার যন্ত্রণা কমায়।
- দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে।
- রসুনের ফাইটোনসাইড অ্যাজমা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় কাজ করে। কোলেস্টেরল কমায়। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ, জন্ম এবং বংশবিস্তারে বাঁধা প্রদান করে।
- দাদ, খোস-পাঁচড়া ধরণের চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে। চামড়ায় ফোসকা পড়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়।
- শিরা উপশিরায় প্লাক জমতে বাঁধা প্রদান করে। রক্ষা করে শিরা উপশিরায় মেদ জমার মারাত্মক রোগ অথেরোস্ক্লেরোসিসের হাত থেকে।
- কোলন ক্যান্সার ও গলব্লাডার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে।
রসুনে রয়েছে একশরও বেশি রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। আর সেই কারণেই রসুন জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। এছাড়াও রসুন খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়। অ্যাজমা, কানে কম শোনা, ব্রংকাইটিস কনজেশনে রসুন উপকারি। ঠান্ডা, সর্দি, কফ, সারাতে সাহায্য করে। ফুসফুস, ব্রংকিয়াল টিউব, সাইনাসের গহবরে মিউকাস জমতে দেয় না। টিবি, নিউমোনিয়া, হুপিং কাশির মতো রোগে রসুন বেশ উপকারি।
ঔষধ হিসেবে রসুন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। নিয়মিত রসুন সেবন রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণও ঠিক রাখে। রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এই রসুন। এমনকি এটি দাঁতের ব্যথাও নিরাময় করে থাকে।
রান্নার উপকরন হিসেবে রসুনের ব্যবহার আবহমান কাল থেকেই। শুধু রান্নায় স্বাদের তারতম্য আনার জন্য নয়, রসুনের পুষ্টিগুণও রসুনকে পৌঁছে দিয়েছে উপাদেয় মসলার তালিকায়। তাই রান্নার অনুষঙ্গের পাশাপাশি রসুন স্বাস্থ্য ভাল রাখার মন্ত্র হিসেবেও কাজ করছে। আর এই জন্যই তো বিজ্ঞানীদের কাছে এখন এর পরিচয় “বিস্ময়কর ঔষধ”নামে।
জেনে নিন খালি পেটে রসুন খেলে কী হয়?
রসুন একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ, যা আমরা খাবারে প্রয়োগ করা ছাড়াও অন্যান্য কাজেও লাগাই। যেমনঃ ঔষধ হিসেবে রসুন খুব কাজে লাগে, আর রান্না করার সময় এটি না থাকলেই নয়। আমরা অনেকে খালি পেটে রসুন খাওয়ার কথা শুনেছি। যা অনেকের কাছে নানী-মায়ের রেসিপি নামেও পরিচিত। খালি পেটে রসুন খাবার বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। খালি পেটে রসুন খেলে বিভিন্ন রোগ দূর হবার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও গড়ে তোলে।
হাজার বছর ধরে খাবার আর ওষুধ, দুই রূপেই রসুন ব্যবহার হয়। প্রায় সাত হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ায় রসুনের প্রচলন ছিল; এরপর আফ্রিকা ও ইউরোপে এর প্রচলন শুরু হয়। খালি পেটে রসুন খাওয়ায় উপকারের কথা বলেছেন অনেক গবেষক। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা রসুনের উপকারিতা
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিকঃ-
গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাবার ফলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর ন্যায় কাজ করে। সকালে নাস্তার পূর্বে রসুন খেলে এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে। তখন খালি পেটে রসুন খাবার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং তখন রসুনের ক্ষমতার কাছে তারা নতিস্বীকার করে। তখন শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহ আর রক্ষা পায় না।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ-
অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার তারা দেখেছেন, রসুন খাবার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ উপশম হয়। রসুন খাবার ফলে তারা শরীরে ভাল পরিবর্তন দেখতে পায়।
অন্ত্রের জন্যঃ-
এটি লিভার, পিত্তথলি ও পাকস্থলী ভালো রাখতে সাহায্য করে। হজমশক্তিকে ভালো রাখে রসুন; পাশাপাশি চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। স্নায়ুর চাপের ফলে পাকস্থলীতে যে এসিড তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে এটি।
খাবার যখন ওষুধঃ-
রসুন অত্যন্ত শক্তিশালী একটি খাবার। বহু বছর ধরে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী।
শ্বাসকষ্টের সমাধান হিসাবে রসুনঃ-
নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসনালির প্রদাহ, ফুসফুসে সমস্যা, অ্যাজমা, কাশি ইত্যাদির সমস্যায় রসুন খাওয়া ভালো। এসব সমস্যা রোধে রসুন কার্যকর।
যক্ষ্মার প্রতিরোধে রসুনঃ-
আপনার যদি টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে পারেন। এতে আপনার যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সহায়তা পাবেন।
শ্বসনঃ-
রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। রসুন এ সকল রোগ আরোগ্যের মাধ্যমে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
শরীরকে ডি-টক্সিফাই করেঃ-
অন্যান্য ঔষধের তুলনায় শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুন প্যারাসাইট, কৃমি পরিত্রাণ, জিদ, সাঙ্ঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং ক্যান্সার এর মত বড় বড় রোগ প্রতিরোধ করে।
এছাড়াও, এর ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় যেমন- ডায়রিয়া। এটা হজম ও ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এটি স্ট্রেস দূর করতেও সক্ষম। স্ট্রেস বা চাপের কারনে আমাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় পরতে হয়। তাই, খালি পেটে রসুন খেলে এটি আমাদের স্নায়বিক চাপ কমিয়ে এ সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
অনেকের রসুনের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না । এখন রসুনকে ঔষধের বড়ি হিসেবে তৈরি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কোনো খাবার নিয়মিত গ্রহণের আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন এবং জেনে নিন খাবারটিতে আপনার কোনো সমস্যা হতে পারে কি না।
যাদের রসুন খাবার ফলে এলার্জি হবার আশঙ্কা রয়েছে বা হয় তারা অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যাদের রসুন খাবার ফলে দেখেন ত্বকে কোনো সমস্যা হচ্ছে, যদি দেহের তাপ বেড়ে যায়, মাথা ব্যথার সমস্যা হয়, বমির প্রাদুর্ভাব হয় বা অন্য কোন সমস্যা দেখা যায় তাদের কাঁচা রসুন না খাওয়া ভাল।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।