তুলসি পাতার উপকারিতা ও তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসি পাতার উপকারিতা

তুলসি পাতার উপকারিতা ও তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসি পাতার উপকারিতা ও তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসি পাতার ছবি

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এর প্রায় সকলই মানুষের কল্যানে আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু কোন উদ্ভিদে কি গুন তা আমরা সবাই জানি না। তুলসী নানা রোগে এ গাছের রসের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকে। গাছটি কৃমিনাশক, বায়ুনাশক, হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত।

তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম

স্থানীয়ভাবে তুলসী পাতার রস দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়। তুলসিপাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়। চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।

 তুলসী মূল শুক্র গাঢ়কারক এবং বাজীকারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণা কম হয়।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তুলসি গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।

কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কালো তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি। তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয় ও কার্যকর।

প্রস্রাবজনিত জ্বালা:

তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।

কালো দাগ: 

মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।

সর্দি: 

যারা সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয় (বিশেষ করে শিশুদের) তারা কিছুদিন ৫ ফোঁটা মধুর সাথে ১০ ফোঁটা তুলসি পাতার রস খেলে সর্দি প্রবণতা দূর হয়।

পেট ব্যথা:

অজীর্ণজনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতা বেশ উপকার সাধন করে থাকে, এটি হজমকারক। প্রতিদিন সকালে ১৮০ গ্রাম পরিমান তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ সেরে যায়।

বাত ব্যথা: 

বাত ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পট্টি দিলে ব্যথা সেরে যায়।

কীট-পতঙ্গ কামড়ালে: 

বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ কামড়ালে ঐ স্থানে তুলসি পাতা ছেঁচে লাগিয়ে দিন।

বসন্ত ও হাম প্রভৃতির পুঁজ ঠিকমত বের না হলে তুলসী পাতার রস খেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে।

ক্রিমি: 

তুলসী পাতার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ক্রিমি রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়। শুষ্ক তুলসী পাতার ক্বাথ সর্দি, স্বরভঙ্গ, বক্ষপ্রদাহ, উদারাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে থাকে।

ঘামাচি ও চুলকানি: 

তুলসী পাতা ও দুর্বার ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানি ভাল হয়।

ম্যালেরিয়া: 

তুলসী পাতা ও শিকড়ের ক্বাথ ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য বেশ উপকারী ৷ ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে প্রতিদিন সকালে গোল মরিচের সাথে তুলসী পাতার রস খেতে দেয়া হয়।

আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি তাজা তুলসী পাতার রসের সাথে একটু আদার রস ও মধুসহ খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস- মধু, আদা ও পিঁয়াজের রসের সাথে এক সাথে পান করলে সর্দি বের হয়ে যায় এবং হাপানিতে আরাম হয়।

তুলসি পাতার উপকারিতা ও তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম || তুলসি প্রনাম মন্ত্র তুলসি মন্দিরের ছবি তুলসি পাতার ছবি


আরো কিছু ঔষধি গুণাগুণ -
........................................................
১। পেট কামড়ানো বা কাশি হলে তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খান কোন কাশি বা পেট কামড়ানো থাকবে না ৷

২। ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য বা ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷

৩। স্নায়ুটনিক ও স্মৃতিবর্ধক বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷

৪। প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ও ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন, উপকার পাবেন ৷

৫। ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান ।

৬। মুখের দুর্গন্ধ রোধ করতে ও খাবারের রূচি বাড়াতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চিবিয়ে রস খান ৷

৭। ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷

৮। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে ৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে ৷

৯। জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন থেকে চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

১০। কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান, এতে উপকার পাবেন ৷

১১। পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান, পেট খারাপ ভালো হয়ে যাবে।

তুলসি প্রনাম মন্ত্র তুলসি মন্দিরের ছবি তুলসি পাতার ছবি

তুলসি মন্দিরের ছবি

বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে তুলসি গুরুত্বের  কারণ:-
......................................................................................................................
১। তুলসীগাছ একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে যেখানে অন্য যেকোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে, তাই রাতের বেলাতে তুলসীতলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী। এছাড়া তুলসী গাছ ভুমি ক্ষয় রোধক এবং তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে।

২। Hypoglycemic drugs এর সাথে তুলসী খেলে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৩। তেজস্ক্রিয়তার ফেলে ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমুহকে মেরামত করে।

৪। চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভুমিকা পালন করে।

৫। তুলসী পাতা Phytochemicals( যেমন oleanolic acid ,beta caryophyllene ইত্যাদি) বহন করে বলে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

৬। তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস Immune system, এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

৭। এই তুলসী শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্নরোগ যেমন- ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ,হাঁপানি প্রভৃতির নিরাময়ক।

৮। দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই তুলসী।

৯। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃ ৎপিন্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

১০। তুলসী হাড়ের গাঁথুনিতে ব্যথা দূর করে এবং শরীরের কাটাছেড়া দ্রুত শুকাতে অবদান রাখে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.