কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং কালোজিরা তেলের উপকারিতা কি
অনেক সময় শোনা যায় যে, সব রোগের মহা-ঔষধ হল এই কালিজিরা, আসুন জেনে নেই কালিজিরার স্বাস্থ্যগুন।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা কি?
চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালিজিরা উপকারী।
মাথা ব্যথায়
মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালিজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
কালোজিরার ফুল
কালিজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালিজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী।
হৃদরোগে
চায়ের সাথে নিয়মিত কালিজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ ও বিগলিত হয়।
মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালিজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
পেটের যাবতীয় রোগে
জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালিজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়।
কি খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়
সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালিজিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে পাবে বেশি পরিমাণে।
রোগ-জীবাণু ধ্বংস
কালিজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল- এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ বা ছোঁয়াচে রোগ হয় না।
মেধার বিকাশে
কালিজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালিজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।
দাঁতের রোগে কালজিরা
দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু ধ্বংশ করে।
কৃমি রোগে
কালিজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে।
কালোজিরা তেলের উপকারিতা কি?
দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাঁটা বা কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগালে ফোড়ার উপশম হয়।
বাড়তি শক্তি
কালিজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপূর্ণ নিদ্রা হয়।
প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালিজিরা খাওয়া হয়।
বহুমুত্র বা মেহরোগ
বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি
মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
এবার আসুন জেনে নেয়া যাক কোন রোগের জন্য কিভাবে কালোজিরা খেতে হয়।
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিঃ
এক চা-চামচ পুদিনাপাতার রস ও এক চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খেতে হবে অবশ্যয় নিয়মিত। কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে।
মাথা ব্যাথা নিরাময়েঃ
১ চা-চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ খেতে হবে।
সর্দি সারাতেঃ
এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হয়।
বাতের ব্যাথা সারাতেঃ
এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও সমপরিমান মধু মিলিয়ে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খাবেন।
বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতেঃ
এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল এককাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩ বার করে ৩ সপ্তাহ পান করুন।
হার্টের বিভিন্ন সমস্যারঃ
এক চা-চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ দুধ খেয়ে দৈনিক ২ বার করে ৪ সপ্তাহ খাবেন এবং কালোজিরার তেল বুকে নিয়মিত মালিশ করবেন।
ব্লাড প্রেসারনিয়ন্ত্রনে রাখতে কালোজিরাঃ
এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণমধুসহ প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অর্শ রোগ নিরাময়েঃ
এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল ও এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৪ সপ্তাহ খাবেন।
শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতেঃ
হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট রোগের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত খাবেন।
ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণেঃ
এক চা-চামচ কালোজিরার তেল গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে নিয়মিত খাবেন।
অনিয়মিত মাসিক রোগঃ
এক কাপ কাঁচা-হলুদের রস ও সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত খেতে হবে। শতভাগ কার্যকরী ।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিরঃ
কচি লাউ যেটার ওজন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম হতে হবে। লাউটি সমানভাবে ১০ থেকে ১৫ টুকরা করবেন তারপর প্রত্যেক টুকরার সাথে এক চিমটি করে কালোজিরা খাবেন। সকালে খালি পেটে খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এটা ১০০% কার্যকরী।
গ্যাষ্ট্রীক ও আমাশয় নিরাময়েঃ
এক চা-চামচ তেল সমপরিমাণ মধু দিনে ৩ বার করে ৩ সপ্তাহ নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আমাশয় ভালো হয়।
জন্ডিস বা লিভারের বিভিন্ন সমস্যায়ঃ
একগ্লাস শরবতের সাথে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল দিনে ৩ বার করে ৫ সপ্তাহ নিয়মিত পান করলে জন্ডিস ভালো হয়। এছাড়া যে কোনো তিন প্রকারের ফল থেকে তৈরি করা হয় তাহলে অনেক ভালো কাজ করে। তিন প্রকার ফল বলতে আমরা অনেক সময় বলে থাকি ত্রিফলা শরবত।
পিঠেব্যাথা দূর করতে কালোজিরাঃ
কালোজিরার তেল আমাদের পিঠে ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও কালোজিরা খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
হজমের সমস্যায় কালোজিরাঃ
প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুই চিমটি যতগুলো কালোজিরা ওঠে সবগুলো কালোজিরা মুখে নিয়ে চিবিয়ে তারপর এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেতে হবে। এভাবে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেটের বিভিন্ন রোগও দূর হবে।
উচ্চরক্তচাপঃ
কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে এ কাজটি ৩ দিন পর-পর করা যায়।
শেষ কথাঃ
দেখুন আসলে কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। আপনি যদি মনে করেন রাতে রাত ফল পাবেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন কেননা প্রত্যেকটা কাজে একটা সাধনার ব্যাপার। আমার উপরে লেখা প্রত্যেকটা বিষয় আপনি যদি কন্টিনিউ করেন তাহলে অবশ্যই ফলাফল পাবেন আল্লাহ যদি আপনার সহায় হোন তাহলে। এছাড়াও আমি মনে করি গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়।
বিঃদ্রঃ
অনেক কষ্ট করে লিখেছি যদি আমার এই লেখা থেকে আপনাদের বিন্দুমাত্র উপকার হয় বা কোন একটি বিষয় যদি আপনাদের কাজে আসে তাহলে অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।