ত্বক ফর্সা করার খাবার ও স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়।
ত্বক ফর্সা করার আগে কতগুলো বিষয়ের উপর নজর দেওয়া উচিত
প্রতিদিন খাবারের মেনুতে টক দই রাখুন টক দই আপনার ত্বককে করবে সুন্দরী লাবণ্যময়ী|
দৈনিক ৪ থেকে ৫ লিটার জল খাবেন।
খুব গরমের সময় সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত রোদে না বেরোনোর চেষ্টা করবেন।
চা কফির মত উত্তেজক পানীয়গুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ এগুলোর প্রভাব ত্বকে মারাত্মকভাবে লক্ষ্য করা যায়। প্রয়োজন হলে দিনে এক থেকে দুবার গ্রিন-টি পান করুন।
ত্বককে তৎক্ষণাৎ সুন্দর এবং ফর্সা করে তোলার জন্য কখনোই কোন ধরনের ব্লিচ ব্যবহার করবেন না। এটি ত্বকের চামড়ার পক্ষে অত্যন্ত খারাপ। ব্লিচের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
আশা করছি প্রাকৃতিক-ভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় ও টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবেন উপাদানগুলোর সাথে আপনার ত্বক মানিয়ে নিতে পারে কিনা। আপনার এক বন্ধু বা আত্মীয় এক উপাদান দিয়ে উপকার পায় বলে আপনিও পাবেন এমন কোন কথা নেই। সেজন্য আমি বিভিন্ন উপাদানের প্যাকের রেসিপি দিয়েছি। সব সময় আগে অল্প করে হাতে লাগিয়ে দেখবেন কোন ধরনের চুলকানি কিংবা জায়গাটা লাল হয়ে যাচ্ছে কিনা। তারপর পছন্দসই প্যাকটি বেছে নিন।
নিজের ত্বককে আরও ফর্সা করার জন্য বিভিন্ন বাজারজাত ফর্সা হওয়ার ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। তবে সেই সমস্ত ক্রিমে ত্বকের উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশি। কেননা বাজারজাত ক্রিমগুলিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দিনের পর দিন ত্বকের ওপর ব্যবহার করার ফলে ত্বক ক্রমশ নষ্ট হয়ে যেতে থাকে এবং মুখের চামড়া দিন দিন পাতলা হয়ে যায়। এই কারণে নিজের ত্বককে আরও সুন্দর, উজ্জ্বল মোহময়ই করে তোলার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের মেলানিন কালচে হয়ে যায়। তাই ত্বককে বাইরের দূষণ ও সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচাতে দৈনন্দিন যত্ন নেওয়া উচিত। পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করালে তা সময় ও খরচা দুটিই ব্যয় করে। তাই ঘরে থাকা কয়েকটি জিনিসের মাধ্যমেই নিজের ত্বককে সহজেই ফর্সা করতে পারেন
চাইলে ঘরে বানিয়ে নিতে পারেন মসুর ডাল আর ডিমের ফেসপ্যাক -
এটি বানাতে হলে মসুর ডাল দু-তিন ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর মসুর ডাল ভালোভাবে মিক্সি বা পাঠাতে বেটে নিতে হবে। এরপর মসুর ডালের সাথে একটা ডিম মিশ্রণ করতে হবে। মসুর ডাল আর ডিমের মিশ্রণে ভালোভাবে শুকাতে হবে শুকানো মিশ্রণটি ভালোভাবে মিহি করে বেটে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি আপনি প্রতিদিন ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারে পানি অথবা গোলাপ জলের সাথে। প্রতিদিন ব্যবহারে আপনার মুখ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল লাবণ্যময়ী প্রাকৃতিক ভাবে ফর্সা।
ত্বক পরিষ্কারে কলার ব্যবহারঃ-
সপ্তাহে একবার পাকা কলা চটকিয়ে মুখে লাগান আর ৩/৪ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মুখে লুকিয়ে থাকা সব ময়লা নিমিষেই পালিয়ে যাবে আর আপনি হয়ে উঠবেন আরও আকর্ষণীয়।
চালের গুঁড়ো ও চায়ের লিকারের ফেসপ্যাক -
আধা কাপ চায়ের লিকার (ঠাণ্ডা), ২ চামচ চালের গুঁড়ো, আধা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। চালের গুঁড়ো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করবে।
লেবু দিয়ে পান সুন্দর ফর্সা ত্বক
একটি পাতিলেবু নিন।
সেটিকে কেটে লেবু থেকে সমস্ত রস বের করে নিন।
সেখান থেকে দু চামচ লেবুর রস এক চামচ জলে মেশান।
এবার এই মিশ্রণটি ত্বকের দাগ ছোপ যুক্ত জায়গায় লাগান।
লেবুর রস মধুর সাথে সম পরিমাণে মিলিয়েও মুখে লাগাতে পারেন।
এটি ত্বক থেকে যাবতীয় নোংরা এবং রোদের পোড়া দাগ তুলতে সাহায্য করবে।
মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন তবে এই মিশ্রণটি মুখে লাগানোর আগে অবশ্যই কানের পিছনে কিংবা গলায় লাগিয়ে দেখে নেবেন।
লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের যেকোনো দাগ ছোপ কে পরিষ্কার করে ত্বককে স্বচ্ছ করে তোলে এবং ত্বকের শুষ্কতা কাটিয়ে তাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। লেবুর মধ্যে থাকা ব্লিচিং উপাদান ত্বককে ভেতর থেকে দাগ ছোপ হীন করে তোলে। এছাড়াও রোদে পোড়া দাগও সহজেই হালকা করে।
কমলার খোসার ফেসপ্যাকঃ-
আমরা সবাই কমলা খেয়ে খোসাটা ফেলে দেই। অথচ এই ফেলনা জিনিসটাই আপনাকে পৌঁছে দিবে আপনার স্বপ্নের অনেক কাছাকাছি। কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর মিহি করে গুঁড়ো করে নিন। তারপর ১ টেবিল চামচ গুঁড়োর সাথে ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
ত্বক ফর্সা করতে হলুদের ব্যবহারঃ-
কাঁচা হলুদ বেটে নিন কিংবা হলুদ গুঁড়ো এক চামচ নিন। এবার তার সাথে দু চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিন। লেবুর রস এবং হলুদ গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। মূলত: যেই সমস্ত জায়গাগুলিতে সূর্যের তাপে কালচে হয়ে গিয়েছে, সেই জায়গাগুলিতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
দুধ ব্যবহার করে ত্বককে আরও ফর্সা করে তুলেন
দুধ এবং মধুকে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ত্বক যদি খুব শুষ্ক থাকে সে ক্ষেত্রে দুধের বদলে দুধের সর মধুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই এই মিশ্রণটি মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক ফর্সা করে তুলতে টমেটোর ব্যবহার
২টি টমেটো মিক্সিতে বেটে নিয়ে মিশ্রণ থেকে টমেটোর রস বের করে নেবেন। তারপর পরিমাণ মতো টমেটোর রস নিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করবেন। টমেটো- লেবুর মিশ্রণটি সারা মুখে লাগাবেন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। সপ্তাহে রোজ স্নানের আগে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে সান ট্যান বা ত্বকের দাগ ছোপ কমে যাবে। কিভাবে এটি ত্বকের সাহায্য করে? টমেটোর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি ত্বকের দাগ ছোপ কমিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা এবং উজ্জ্বল করে তোলে। ত্বকের মধ্যে থাকা লাইকোপিন নামক উপাদান ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং ত্বকের ওপরে থাকা মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে ত্বকের ট্যান দূর করতে সহায়তা করে।
ত্বক ফর্সা করতে দইয়ের ভূমিকা
টক দই এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার প্যাকটি পরিষ্কার ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট প্যাকটি লাগিয়ে রাখুন। অল্প শুকিয়ে এলে সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে রোজ এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং ফর্সা করে তুলতে সহায়তা করবে।
গোলাপ জলঃ-
প্রতিদিন গোলাপ জল তুলোর মধ্যে নিয়ে মুখটা পরিষ্কার করুন। দিনে ২ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন। স্নানের আগে কিংবা বাইরে থেকে ঘুরে আসার পর গোলাপ জল দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে নিন। এটি ত্বকের উপরিভাগে থাকা নোংরাগুলিকে দ্রুত সরিয়ে ফেলে ত্বককে একটি সতেজতার অনুভূতি এনে দেবে।
ত্বক পরিচর্যায় পেঁপের ব্যবহারঃ-
অর্ধেক পাকা পেঁপেটি মিক্সিতে ভালো করে বেটে নিন। এরপর মিশ্রণ করা পাকা পেঁপেটির মধ্যে মধু এবং লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার প্যাকটি মুখে গলায় ঘাড়ে হাতে ভাল করে লাগিয়ে নিন। এবার ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর সাধারণ জল দিয়ে এগুলো ধুয়ে ফেলুন। পাকা পেঁপে সরাসরি আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। দৈনিক স্নানের আগে হাতে মুখে একবার যদি পাকা পেঁপে ব্যবহার করে নিতে পারেন তাহলে সান ট্যানের সমস্যা কমবে এবং আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। পেঁপের এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
বেসন দিয়ে ত্বক ফর্সা করে তুলেনঃ-
বেসন, দুধ এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে পরিষ্কার হাতে আস্তে আস্তে মুখের ত্বকের ওপর মেসেজ করুন। এরপর ১৫ মিনিটের জন্য এটি মুখে রেখে দিন। কিছু সময় পর মিশ্রণটি শুকিয়ে যাবে, তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করবে।
মধুর ফেসপ্যাকঃ-
দুধের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে জাফরানটাকে ফুটিয়ে নিন। এরপর দুধ টাকে ঠাণ্ডা করে নিন। দুধ ঠাণ্ডা হলে তার মধ্যে ভালো করে চন্দন পাউডার মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার এই প্যাকটি মুখে গলায় সমস্ত জায়গায় লাগিয়ে নিন। প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে মুখের ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় হয়ে উঠবে এবং যেকোনো দাগ কমে যাবে।
চালের গুড়ার ফেসপ্যাকঃ-
চালের গুঁড়ো, শসার রস এবং লেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দেওয়ার পর উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার এই প্যাকটি মুখে ব্যবহার করুন। মুখে ছোট ছোট দানা জাতীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে কিংবা ব্রণর সমস্যায় এটি যথেষ্ট কার্যকরী।
ডাবের জলঃ-
পরিমাণ মতো ডাবের জল নিয়ে মুখ এবং ঘাড় এ ভালো করে লাগিয়ে নিন। জলটি লাগানোর পর হালকা হাতে একটু মেসেজ করে নিন। তারপর আরেকবার ত্বকের ওপরে ডাবের জল লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিনদিন স্নানের আগে কিংবা পরে এটি ব্যবহার করতে পারেন। দু সপ্তাহ ব্যবহারের পরেই ত্বকের মধ্যে তফাৎটা বুঝতে পারবেন। যে ত্বককে আরও কত উজ্জ্বল এবং দাগহীন করে তুলেছে ডাবের জল। কিভাবে এটি ত্বকের সাহায্য করে?
গ্রিন টিঃ-
গ্রিন টি ব্যাগ দুটো কেটে গ্রিন টি গুলো বের করে নিন। এবার গ্রীন টির সাথে লেবুর রস এবং মধু যোগ করে একটি ভাল মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি দৈনন্দিন ব্যবহার করার ফলে ত্বক আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
গরম তেল ম্যাসাজঃ-
বাদাম তেল/ জলপাই তেল – পরিমাণ মতো নিম পাতা – কয়েকটা নিমপাতা প্রথমে যে তেলটা নেবেন তা বাদাম তেলই হোক কিংবা জলপাই তেল সেটিকে হালকা গরম করে নিন। এর মধ্যে নিম পাতা দিয়ে তেলটির মধ্যে হালকা গরম করে নিন। এরপর সারা শরীরে তেল ভালো করে মাসাজ করে নিন। ৩০ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। তারপর ভালো করে স্নান করে নিন। এইভাবে সপ্তাহে দুবার যদি এটি করতে পারেন তবে এটি ত্বককে আরও সুন্দর করে তুলবে |
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।