পালং শাকের পুষ্টিগুণ
পালং শাকের উপকারিতা
পালং শাক কমবেশি প্রায় সবারই প্রিয়। এই শাক রান্না করা ঝোল অনেকে স্যুপের মতো করে খায়। এই শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও মাছের সঙ্গে খাওয়া যায় সহজেই। পালং শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাকের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়।
পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। রক্ত বৃদ্ধিও করে। চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
পালংশাকে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’, ‘এ’, ‘সি’, ‘বি২’ ও ফলিক অ্যাসিড থাকে, তেমনি ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে ২৩ ক্যালরি, ৩ গ্রাম আমিষ, ৪ গ্রাম শর্করা ও ২ গ্রাম আঁশ থাকে, তবে কোনো চর্বি নেই।
পালংশাকে প্রচুর পানি থাকে। আর তাই রান্নার সময় পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে নেবেন, পরে ভাগে যেন কম না পড়ে! পালংশাকে দ্রুত পচন ধরে। সংরক্ষণ করতে হলে বায়ুরোধী পলিব্যাগের ভেতর আঁটি খুলে ছড়িয়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন। হিমায়িত করেও সংরক্ষণ করা যায়।
শীতকালীন সবজি হলেও বাজারে সারা বছর পালংশাক দেখা যায়। দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনে পালংশাক। রক্তের গুণাগুণ বাড়ায়। পালংশাকের আয়রন লাল রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে, যা সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে বলে জানালেন পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ।
•পালংশাকের চেয়ে বেশি ভিটামিন ‘কে’ সমৃদ্ধ সবজি খুঁজে পাওয়া কঠিন। হাড় সুরক্ষায় এই ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
* অকাল অন্ধত্ব এবং রাতকানা রোধে পালংশাকের ভিটামিন ‘এ’ খুব কাজে দেয়।
* ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং চুল পড়া রোধ করতেও পালংশাক কার্যকরী।
* ক্যানসার প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে পালংশাক অপরিহার্য।
* আঁশসমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় পালংশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* চিনি না থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরা নিশ্চিন্তে পালংশাক খেতে পারেন।
পালং শাকের অপকারিতা
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
পালংশাকে প্রচুর অক্সালেট থাকে। কিডনির পাথরে অক্সালেট পাওয়া গেছে এমন কেউ বেশি পরিমাণে পালংশাক খাবেন না, পরিহার
করাই ভালো। এতে অক্সালিক অ্যাসিডের পরিমাণও বেশি। বেশি অক্সালিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শুষে নেয়। হালকা রান্না করলে এই অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায় বলে ধারণা করা হয়।
পালং শাকের একটি জাতের নাম
পুষা জয়ন্তী, কপি পালং, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং। এছাড়া আছে নবেল জায়েন্ট, ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি ইত্যাদি।
পালং শাক চাষ পদ্ধতি
পালং শাক চাষ
মাটি: দোআঁশ উর্বর মাটি বেশি উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।
জমি তৈরি: জমি চাষ ও মই দিয়ে মাটি মিহি করে তৈরি করতে হবে।
সারের নাম এবং শতক প্রতি পরিমান
গোবর⇒ ৪০ কেজি
ইউরিয়া⇒ ১ কেজি
টিএসপি⇒ ৫০০ গ্রাম
এমপি⇒ ৫০০ গ্রাম
সার প্রয়োগের নিয়মাবলি:
ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পালংশাকের জমিতে নিয়ম অনুযায়ী গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের হার:
প্রতি আলে ⇒৩৫-৪০ গ্রাম
প্রতি শতকে ⇒১১৭ গ্রাম
প্রতি একরে ⇒৯-১১ কেজি
প্রতি হেক্টরে ⇒২৫-৩০ কেজি
পালং শাকের বীজ বপনের সঠিক সময়: সেপ্টেম্বর- জানুয়ারি মাস।
বীজ বপনের দূরত্ব: ১০ সেমি দূরে দূরে বীজ বপন করতে হয়। তবে ছিটিয়েও বীজ বপন করা যায়।
অঙ্কুরোদগমের সময়: বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগে।
বীজ বপন বা চারা রোপণ:
জমিতে আলে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে বা গর্ত তৈরি করে মাদায় বীজ বপন করা যায় অথবা বীজতলায় চারা তৈরি করে সে চারা রোপণ করেও পালংশাক চাষ করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করে প্রতি মাদায় ২-৩ টি করে বীজ বপন করতে হয়।
পরিচর্যা:
আগাছা নিধন: জমিতে আগাছা দেখা দিলেই তা তুলে ফেলতে হবে।
সেচ প্রয়োগ:
এ শাকের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা রোপণের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
গাছ পাতলা করণ:
বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফাঁকা জায়গায় রোপণ করতে হয়।
ক্ষতিকর পোকামাকড়:
পালংশাকে মাঝে মাঝে পিপঁড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা: পালংশাকের প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে-
১) গোড়া পচা রোগ
২) পাতার দাগ রোগ
৩) পাতা ধ্বসা রোগ।
এছাড়া পালংশাকে আরও দুইধরনের রোগ দেখা যায়। যেমন- ডাউনি মিলডিউ, পাতায় দাগ।
ফলন:
প্রতি আলে⇒ ৮-১০ কেজি
প্রতি শতকে⇒ ২৮-৩৭ কেজি
প্রতি একরে⇒ ২৮০০-৩৮০০ কেজি
প্রতি হেক্টরে⇒ ৭-৯ টন
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।