ঘাড় ব্যাথা দূর করুন
গলা ও ঘাড় ব্যাথা ও ঘাড়ে ব্যথা হলে করনীয়
ঘাড়ের নিচে ব্যাথা বা ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার কারণ কি?
ঘাড়ে ব্যাথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এলোমেলো হয়ে ঘুমালে, অনেকক্ষণ যাবত কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে, বাঁকা ভাবে বসলে মাংসপেশিতে চাপ পড়লে অথবা ভারী কিছু বহন করলে যা কাঁধে অনেক চাপ দেয় ইত্যাদি কারণে ঘাড়ে ব্যাথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যাটি হতে পারে।
এছাড়াও অ্যাংজাইটি ও স্ট্রেস যা ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান বা পীড়া উৎপন্ন করে, মানসিক আঘাত, ঘাড়ে আঘাত পেলে এবং কিছু রোগ
যেমন- রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস বা ক্যান্সারের কারণেও ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে। যাই হোক আপনার জীবনাচরণের সামান্য কিছু পরিবর্তন এবং ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন তাহলে জেনে নেই ঘরোয়া উপায় গুলো কী!
ঘাড়ে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া ঘরোয়া উপায়
ঘাড়ের ব্যায়ামঃ-
ঘাড়ের ব্যায়াম ঘাড়ের ব্যাথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া দূর করতে অনেক উপকারী। সোজা হয়ে বসুন, আপনার শরীরকে শিথিল হওয়ার জন্য সময় দিন।
আপনার মাথাটি বুকের দিকে নামিয়ে আনুন, তারপর আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে মাথাটি পেছনের দিকে নিন। এইভাবে কয়েকবার করুন।
আপনার মাথাটি একবার ডান দিকে কাঁত করুন তারপর বাম দিকে কাঁত করুন। এইভাবেও কয়েকবার করুন।
আপনার শরীর না নাড়িয়ে মাথাটি আস্তে আস্তে ডান দিকে ঘুড়ান তারপর বাম দিকে ঘুড়ান। এইভাবে কয়েকবার করুন। আস্তে আস্তে কাঁধ ঘুড়িয়ে আপনার ব্যায়াম শেষ করুন।
যদি কাঁধের এই ব্যায়াম করতে যেয়ে খুব বেশি ব্যাথা অনুভব করেন তাহলে ব্যায়াম করা বাদ দিন।
গরম থেরাপিঃ- ঠান্ডা থেরাপি দিয়ে ব্যাথা না গেলে গরম থেরাপি নিন। এক্ষেত্রে হট ওয়াটার ব্যাগ বা হট ওয়াটার বোতল বা গরম পানিতে পাতলা তোয়ালে ভিজিয়ে ঘাড়ে দিতে পারেন। দিনে ২-৩ বার গরম থেরাপি নিন।
এছাড়াও যে বিষয় গুলোর প্রতি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে
- ঘুমের সময় একের অধিক বালিশ ব্যবহার করবেননা।
- মোবাইলে অনেক বেশি টেক্সট করা থেকে বিরত থাকুন।
- বসে কাজ করার সময় সোজা হয়ে বসুন।
- নিয়মিত সাঁতার কাটলে ঘাড়ের ব্যাথা প্রতিরোধ করা যায়।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেক কলার ব্যবহার করবেননা।
যদি এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করার এক সপ্তাহ পর ও ব্যাথা না ভালো হয় এবং যদি জ্বর থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
ঘাড় ম্যাসাজঃ-
ঘাড়ের ব্যাথা দূর করার জন্য একটি ভালো উপায় হচ্ছে মালিশ করা। ম্যাসাজ করলে মাংসপেশী শিথিল হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কাঠিন্য দূর হবে এবং ঘুম ভালো হতে সাহায্য করবে। কাঁধের ব্যথা কমাতে ম্যাসাজ আরেকটি চমৎকার ঘরোয়া উপায়। হালকা ম্যাসাজ দুশ্চিন্তা ও চাপ কমাতে সাহায্য করে।নারকেল তেল অথবা জলপাইয়ের তেল হালকা গরম করুন এবং কাঁধে মাখুন। এভাবে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
গরম পানি দিয়ে গোসল করলে মাংসপেশি শিথিল হয়। জলপাই তেল, সরিষার তেল বা নারিকেল তেল গরম করে ঘাড়ে মালিশ করুন কয়েক মিনিট যাবত। নিজে না পারলে মালিশ করার জন্য অন্য কারো সাহায্য নিন।
ঠান্ডায় ঘাড় ব্যাথা
ঠান্ডা থেরাপিঃ-
ঠাণ্ডা থেরাপি দিলে অসাড়তার ব্যাথা কমে এবং মাংসপেশির মেটাবলিজমের ফলে সৃষ্ট ল্যাকটিক এসিড তৈরি হতে বাধা প্রদান করে যা ব্যাথা সৃষ্টির জন্য দায়ী। একটি পাতলা তোয়ালের মধ্যে বরফের টুকরা নিয়ে ঘাড়ের মধ্যে ১০-১৫ মিনিট চেপে ধরে রাখুন। প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতি ২ ঘন্টা পরপর বরফের থেরাপি নিন।
ঘাড় ব্যথা কমিয়ে নিন
ঘাড় ব্যথা বেশ প্রচলিত সমস্যা। ভুল অঙ্গবিন্যাস, আরথ্রাইটিস ইত্যাদি কারণে ঘাড় ব্যথার সমস্যা হতে পারে। ঘাড় ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো ঘাড় ব্যথা কমাতে কাজ করে।
ঘাড়ে ব্যথায় ব্যাবহার করুন হলুদঃ-
কাঁধের ব্যথা কমাতে হলুদ একটি চমৎকার উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট; রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান। এটি ফোলা ও ব্যথা কমাতে কাজ করে। দুই টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ার মধ্যে এক টেবিল চামচ নারকেলের তেল মেশান।মিশ্রণটি কাঁধে মাখুন এবং শুকাতে দিন। এ ছাড়া এক কাপ দুধের মধ্যে এক কাপ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে সিদ্ধ করুন।এরপর মিশ্রণটি পান করুন। এটিও ঘাড় ব্যথা কমাতে কাজ করবে।
ঘাড়ে ব্যথায় ব্যাবহার করুন আদাঃ-
আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি ব্যথা কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। আদা কেটে নিন। এরপর দুই/তিন টুকরো কাটা আদা দুই কাপ পানির মধ্যে সিদ্ধ করুন। এর মধ্যে মধু যোগ করুন। দুই থেকে তিন কাপ আদা চা প্রতিদিন পান করুন।
ঘাড়ে ব্যথায় কমানোর সহজ কয়েকটি ব্যায়াম
- মাথা সোজা রাখুন। কপালে হাত রেখে মাথা দিয়ে হাতে চাপ দিতে চেষ্টা করুন। একইভাবে মাথার ডান দিকে, বাঁ দিকে ও পেছনে হাত রেখে মাথার সাহায্যে চাপ দেন। এভাবে প্রতিবেলায় কয়েকবার করে এই ব্যায়াম করতে পারেন।
- যাঁদের ঘাড়ে ব্যথার পাশাপাশি ঘাড় নাড়াতেও অসুবিধা হয়, তাঁরা প্রথম শিথিলায়ন ব্যায়াম করতে পারেন। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্নভাবে ঘাড় নাড়িয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। সামনের দিকে যতটা সম্ভব, ঘাড় বাঁকিয়ে ফেলুন। এরপর যতটা সম্ভব, পেছনের দিকে ঘাড় বাঁকা করুন। একইভাবে ডান দিকে ও বাঁ দিকে ঘাড় বাঁকা করতে চেষ্টা করুন। যতটা সম্ভব, তত দূর পর্যন্ত ঘাড় নাড়ানো হলে ধীরে ধীরে সীমা বা দূরত্ব বাড়তে থাকবে। এই ব্যায়ামও কয়েকবার করে দু-তিন বেলা করতে পারেন।
- প্রথমে ঘাড় সোজা রেখে আরাম করে বসুন। দুই কাঁধ উঁচু করে রাখুন ১০ সেকেন্ড। এরপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। প্রতিবেলায় পাঁচবার করে তিন-চার বেলা ব্যায়ামটি করতে পারেন। এই ব্যায়াম করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে আরও কার্যকর হবে। এ ক্ষেত্রে ঘাড় সোজা রেখে আরাম করে বসার সময় লম্বা করে শ্বাস নিতে হবে। কাঁধ উঁচু করার সময় শ্বাস ধরে রাখতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসার সময় আস্তে করে শ্বাস ছাড়ুন। ঘাড়ের সঙ্গে হাতে ব্যথা থাকলেও এই ব্যায়াম বেশ কাজে দেবে।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।