শিশুর হাম রোগ
শিশুর হামের লক্ষণ এবং শিশুর হাম হলে কি করনীয়
হাম ভাইরাসজনিত অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ। এ রোগে শিশুরাই প্রধানত আক্রান্ত হয়, ঘরে একজন যদি হামের টিকা না নিয়ে থাকে তবে অন্যদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশের ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদেরই হাম বেশি হয়, তবে তার মধ্যে ১ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি।
সাধারনত রোগীর গায়ে র্যাশ বা দানা উঠার ৪ দিন আগে থেকে এবং ৪ দিন পর পর্যন্ত রোগটা সংক্রামক থাকে, এই সময়ের মধ্যে কেউ রোগীর সংস্পর্শে এলে প্রায় ১৪ দিন পর তার হাম হবে। সাধারনত রোগীর হাঁচি-কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগটি ছড়ায় তবে রোগীর গলার শ্লেষ্মা কোন না কোন ভাবে কারুর সংস্পর্শে এলে তারও হাম হতে পারে।
হামের লক্ষণ
হাম সাধারনত সর্দির লক্ষণ দিয়ে শুরু হয়। জ্বর হয়, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ১০৩-১০৫ ডিগ্রি ফাঃ উঠে যায়। চোখে লাল ও ছলছল ভাব থাকে এবং তারপরে শুকনো খন খনে কাশি হয়। তারপর মুখের ভেতরে কয়েকটা নুনের দানার মত ছোট ছোট দাগ বের হয়, যাকে ‘কপ্লিক স্পট’ বলে।
অসুস্থতা শুরু হবার ৪র্থ ও ৫ম দিনে র্যাশ বা হামের দাগ বের হয়- লাল গুঁড়ি গুঁড়ি দানা, দেখতে অনেকটা ঘামাচির মত, প্রথমটায় চুলের রেখা বরাবর ও কানের পেছনে আর ঘাড়ে, তারপর মুখে ও গলায় এবং সেখান থেকে নীচে নামতে নামতে শেষে হাতে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। র্যাশ বেড়িয়ে যাবার পর সাধারনত রোগী ভাল হতে শুরু করে। ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে র্যাশগুলো চলে গেলে গায়ে কালচে দাগ রয়ে যায়। এ সময়ে আলতোভাবে কোথাও কোথাও চামড়া পিঁইয়াজের ছিলকার মত খসে যায়।
হামের জটিলতা
জটিলতার দিক দিয়ে চিন্তা করলে হাম একটি মারাত্মক রোগ। হাম নিজে যতটুকু না ক্ষতিকর এর জটিলতা তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর এবং এ রোগ মৃত্যুর কারন। এর মধ্যে মুখের গভীর ও বিস্তৃত ঘা, চোখের কর্ণিয়া (মনি) ঘোলাটে হওয়া, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং কান পাকা প্রধান।
যে সব শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য হাম সব সময়ই মারাত্মক। হাম হলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং তা এক বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকতে পারে। এছাড়াও হাম পুষ্টিহীন্তা, মস্তিষ্কে সংক্রমন, ভিটামিন-এর অভাবজনিত চোখের রোগ, চর্মরোগসহ আরো না জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। হাম হলে শিশুর সুপ্ত যক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে শিশুকে প্রকটভাবে আক্রমণ করতে পারে।
হামের চিকিৎসা
হামের বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই, শিশুকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং সকল প্রকার শাক-সব্জি খেতে দিতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল এবং গায়ে চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন দেয়া যেতে পারে।
হামে আক্রান্ত শিশুকে ভিটামিন-এ আবশ্যিক ওষুধ হিসাবে খাওয়াতে হবে। সাধারন হামে ভিটামিন-এ’র ২ ডোজ করে পরপর ২ দিন। যদি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কান পাকা বা মেনিনজাইটিস দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হামের প্রতিরোধ
ঘরের কোন শিশুর যদি হাম হয়ে থাকে এবং অন্যান্য শিশুদের হামের টিকা দেয়া না থাকে তবে তাদেরকে ইঞ্জেকশান গামা গ্লোবিউলিন ১-২ মিঃ লিঃ/কেজি, মাংসপেশীতে দিতে হবে। এতে এসব শিশুরা আপাততঃ হামের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
হামের টিকা অত্যন্ত কার্যকরী। শিশুর ৯ মাস পূর্ণ হয়ে ১০ মাসে পড়লেই হালের টিকা দিয়ে দিতে হবে। একবার ‘হাম’ এ ভুগলে বা হামের টিয়াকা দিলে জীবনে আর হাম হবার সম্ভাবন প্রান নেই। হামের টিকা দেবার পরও কদাচিৎ নগণ্য মাত্রায় হাম হতে পারে।
দোয়া করি এভাবেই মানুষের জন্য উপকারি টিপস্ দিয়ে যেতে পারেন।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।