নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিতে হয় এবং নবজাতকের যত্নে করণীয় By Healthybangaly

 নবজাতকের যত্নে করণীয়

নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়  এবং নবজাতকের যত্নে করণীয়

নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়  এবং নবজাতকের যত্নে করণীয়


শিশু জন্মের আগাম প্রস্তুতি

পরিবারে নতুন শিশু আসবে, এ নিয়ে কারো উত্তেজনার কমতি নেই। পরিবারের নতুন সদস্যের দরকারী জিনিস পত্র কি কি লাগতে পারে, শিশুটি ছেলে না মেয়ে, বাড়তি কাপড় কোথায় কিভাবে ধোয়া হবে, কোথায় শুকানো হবে, কে দেখা শুনার দায়িত্বে থাকবে, কে কিভাবে সময় ম্যানেজ করবে, বাড়িতে যারা শিশুকে দেখতে আসবেন তাদের কিভাবে ম্যানেজ করা হবে, শিশুকে নিয়ে কি কি করা হবে, বড় হবার সাথে সাথে কি কি করতে হবে, কোথায় কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই মিলে এক সুন্দর সময়ের অপেক্ষা করছেন। মনে মনে কিছুটা আতংকও আছে, কোন অসুবিধা হলে সেটা কিভাবে সমাধান হবে। 


শিশু জন্মের পূর্বেই কিছু প্রস্তুতি যেমন রক্ত দাতা, হাল্কা পাতলা কিছু কেনাকাটা, আর অবশ্যই টাকা পয়সা এর ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।কারন শিশু জন্ম এর পরবর্তি সময় টা খুব দ্রুত কেটে যাবে আর তখন কোন ও কিছু ভেবে করার মত অবকাশ থাকেনা।



নবজাতকের জন্মকালীন সতর্কতা


নতুন শিশু জন্মের পরপর সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন বিষয়, আনন্দ ফূর্তি নিয়ে।কিন্তু শিশু জন্মের পরপর প্রথম যেটা করনীয় তা হল শিশুর কিছু বিষয় এ দৃষ্টিপাত করা।

শিশু জন্মের পরপর কিছু বিষয় নোট ডাউন করে নেয়া উচিত।প্রথমত ,শিশুর ওজন।শিশুর ওজন জন্মের সাথে সাথে পর্যবেক্ষন করে নিতে হবে।তারপর শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস ভাল মত চেক করতে হবে। শিশুর জন্মকালীন কোনও ত্রুটি আছে কিনা সেটাও খেয়াল করতে হবে। শিশুর রক্ত পরীক্ষা (যদি সম্ভব হয়) করে ব্লাড গ্রুপ চেক করে নেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বিলুরুবিন চেক করে নেয়া টাও জরুরী।



শিশুর নামকরন ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে


শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলিমদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা একেবারে অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন,হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম বা উপনাম রাখা সমীচীন হবে!?


এক: নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে।


দুই: নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাবচরিত্র নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। 


 

তিন: আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে ডাকে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজন বা অপর কোনো ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।


 

চার: কোনো ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তাকে তার সন্তানের নাম দিয়ে গঠিত কুনিয়ত বা উপনামে ডাকা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় সন্তানের নামের পূর্বে আবু বা পিতা শব্দটি সম্বন্ধিত করে কুনিয়ত রাখা উত্তম। 


পাঁচ: যদি কারো নাম ইসলামসম্মত না হয়; বরঞ্চ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম হয় তাহলে এমন নাম পরিবর্তন করা উচিত।


 

ছয়:সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বাংলা শব্দে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যায়। ইসলামী নীতিমালা লঙ্গিত না হলে এবং এতদ অঞ্চলের মুসলিমদের ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে এমন নাম রাখাতে দোষের কিছু নেই।



নবজাতকের টীকা



যথাযথ সময়ে নবজাতকের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া নিয়ে মা-বাবা অনেক সময় দুশ্চিন্তায় পড়েন। কখন কোন টিকা, একসঙ্গে এতগুলো টিকা দেওয়া ঠিক কি না, শিশু অসুস্থ থাকা অবস্থায় টিকা দেওয়া যায় কি না, কোনো কারণে তারিখ পেরিয়ে গেলে কী করতে হবে—এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।


শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে আবশ্যক টিকাগুলোর সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে বিসিজি (যক্ষ্মা), ডিপিটি (ডিপথেরিয়া-হুপিংকাশি-ধনুষ্টঙ্কার), পোলিও, হেপাটাইটিস বি ও হামের টিকা। এ ছাড়া রয়েছে নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, বসন্ত ও অন্য কিছু টিকা, যা বাধ্যতামূলক নয়।

একই টিকার দুটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতি থাকা উচিত।

একই দিনে একাধিক টিকা দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।

কোনো কারণে তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস বি তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পরে দিতেও সমস্যা নেই।

পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পর ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়।

বিসিজি টিকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ঘা হওয়ার কথা।

সাধারণত ডিপিটি বাম ঊরুতে ও হেপাটাইটিস ডান ঊরুতে দেওয়া হয়।

নয় মাস বয়সের আগে হামের মতো হয়ে থাকলেও যথাসময়ে মানে নয় মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দেবেন।




নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়  এবং নবজাতকের যত্নে করণীয়

নবজাতকের কখন কোন টীকা দিতে হয়



বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় টিকা


হেপাটাইটিস-বি টিকা (হেপ বি)


সকল নবজাতকের হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার আগে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (হেপ বি) নেয়া উচিত।

হেপ বি টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে নিচের চার্ট লক্ষ্য করুনঃ


হেপাটাইটিস-বি টিকা


জন্মের পর-৬ সপ্তাহ👉 হেপাটাইটিস-বি টিকা


৬ সপ্তাহ/২ মাস👉 হেপাটাইটিস-বি টিকা


১০ সপ্তাহ / ৪ মাস👉 হেপাটাইটিস-বি টিকা


১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস👉 হেপাটাইটিস-বি টিকা (১ম বুস্টার ডোজ ) 


১৫-১৮ মাস👉 হেপাটাইটিস-বি টিকা


৪-৬ বছর👉 এছাড়া হেপ এ ওয়ান এবং হেপ এ টু টিকা গুলো ১২ মাস পরই দিয়ে দিতে হবে।


পোলিও  টিকা


পোলিও একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা দেয়া। দুইভাবে পোলিও টিকা দেয়া যেতে পারে। যথা- ও. পি. ভি. এবং আই. পি. ভি. । ও. পি. ভি. হল ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন যা মুখে খাওয়ানো হয়ে থাকে এবং আই. পি. ভি. হল ইনএক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন যা ইনজেকসান এর মাধ্যমে দেওয়া হয়।


নিচের পোলিও টিকার চার্ট লক্ষ্য করুনঃ


ও. পি. ভি.  👉জন্মের পর থেকে ৬ সপ্তাহ


ও. পি. ভি./আই. পি. ভি.👉৬ সপ্তাহ/ ২ মাস


ও. পি. ভি./আই. পি. ভি.👉১০ সপ্তাহ / ৪ মাস


এছাড়াও আরো কিছু মুল্যবান বিষয় পড়ুন



ও. পি. ভি.👉১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস


ও. পি. ভি.👉৯ মাস


ও. পি. ভি./আই. পি.ভি. 👉(১ম বুস্টারডোজ ) 


১৫ – ১৮ মাস👉ও. পি. ভি./ আই. পি. ভি.



বিসিজি টিকা

বিসিজি টিকা হলো যক্ষ্মার প্রতিষেধক। শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই টিকা দিতে হয়। বিসিজি টিকা দিলে মরণব্যাধি যক্ষ্ম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই টিকার শুধু মাত্র একটি ডোজ। বাম হাতের কাধের কাছের হাতের অংশের চামড়ার নিচে এটি দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে হালকা ক্ষত বাম লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার মত কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।


ডিপিটি টিকা

ডি তে ডিপথেরিয়া, পি তে পারটোসিস বা হুপিং কাশি ও টি তে টিটেনাস। তিনটি মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণরোগের নাম। ডিপিটি টিকাটি এই তিনটি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই শিশুর জন্য এই টিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ।পারটুসিস টিকা দেয়ার সময় অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যাদের এ প্রবণতা বেশি বা শরীর দুর্বল তাদের শুধু ডিপথেরিয়া ও টিটেনাসের টিকা দেয়া হয়। টিটেনাস বা ধনুষ্টাঙ্কারের টিকা শিশুদের জন্য খুবই জরুরী।


নিচের পোলিও টিকার চার্ট লক্ষ্য করুন


ডিপিটি টিকা👉৬ সপ্তাহ / ২ মাস


ডিপিটি টিকা 👉১০সপ্তাহ / ৪ মাস


ডিপিটি টিকা 👉১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস


ডিপিটি টিকা   (১ম বুস্টার ডোজ ) ১৫-১৮ মাস এবং ডিপিটি টিকা  ৪-৬ বছর।


হামের টিকা

হামের টিকা শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি টিকা। হাম একটি খুব মারাত্নক কষ্টদায়ক একটি রোগ। এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য শিশুদের অবশ্যই হামের টিকা দেয়া উচিত। শিশুর ১৫ মাস বয়সে এ টিকা দিতে হয়।


টাইফয়েড টিকা

টাইফয়েড একটি মারাত্নক ঘাতক ব্যাধি যা শিশুর যে কোনো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারে এবং শিশু হারিয়ে ফেলতে পারে তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। এই রোগ জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে। তাই সময়মত শিশুদের টাইফয়েড এর টিকা দিতে হয়। দুই বছর বয়সের পর শিশুদের এই টিকাটি তিন বছর পর পর দিতে হয়।


রোটাভাইরাস টিকা

ডায়রিয়া বাচ্চাদের জন্য একটি হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাচ্চা ছোট বয়সে ডায়রিয়াতেভোগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক পরিচর্যা করা হলে ডায়রিয়া থেকে বাচ্চা সুস্থ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া প্রাণঘাতক হতে পারে। তাই ডায়রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে বাচ্চাদের রোটা ভাইরাস এর প্রতিষেধক রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন বা আরভি দিতে হবে। ডায়রিয়ার প্রতিষেধকের টিকা তিনটি ডোজে নিতে হয়। প্রথম ডোজ ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের বয়সের মধ্যে দিতে হবে। পরবর্তী ডোজ  ১০ সপ্তাহ/৪মাসের মাঝে দিতে হবে।


নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে শিশু মৃত্যুহারের অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী ভাইরাস হল নিউমোকক্কাস (স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি) ও হেমোফাইলাস ইনইয়ুযেকি। এই দুই ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসেবে এই টিকার কোন বিকল্প নেই। এর জন্য সিজনাল অ্যান্টি ভাইরাল ভ্যাকসিন বা নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন যে কোনটি দিলেই হয়। সাধারনত অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের এই টিকা দিতে হয়। নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দিলে ফুসফুসের সংক্রমণ কম হয় এবং ঝুঁকি কম থাকে।নিম্নোক্ত সময় সীমায় নিউমোকক্কাল টিকা টি দেওয়া হয়-

নিউমোকক্কাল টিকা


৬ সপ্তাহ / ২ মাস>>>নিউমোকক্কাল টিকা


১০ সপ্তাহ / ৪ মাস>>>নিউমোকক্কাল টিকা


১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস>>>নিউমোকক্কাল টিকা (১ম বুস্টারডোজ )>>১৫ – ১৮ মাস


ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন

ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে ব্যাধি। এই ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় । এই রোগে প্রথমে অনবরত হাঁচি হয় ও নাক দিয়ে জল পড়ে, পরে প্রচন্ড গা, হাত, পা বেদনা সহ তীব্র জ্বর হয় । তাই  বাচ্চাদের এই রোগের টিকা দেয়া অত্যন্ত জরুরী। এই রোগের জন্য সাধারণত দুই ধরনের টিকা আছে- টিআইবি ও এএআইভি। এর মধ্যে টিআইবি ছয় মাস বয়সে এবং এএআইভি দুই বছর বয়সের পর দিতে হয়।


চিকেন পক্স টিকা

চিকেন পক্স বা জল বসন্ত একটি ভাইরাস সংক্রমক রোগ। জন্মের ৫ দিনের মাঝে এই রোগ হলে মারাত্মক ভাইরেমিয়া-এ জনিত কারণে বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে। জল বসন্ত প্রতিরোধ করতে শিশুর জন্মের ১২ মাস পরে এবং ৪-১২ বছরের মাঝে দুই ডোজে টিকা দিতে হয়।


এম এম আর টিকা

এম এম আর মূলত মাম্পস, মিজলস এবং রুবেলা রোগের টিকা। এই রোগ গুলোর টিকা প্রধানত ৪ থেকে ৬ বছরের মাঝেই দিয়ে দিতে হয়।



নবজাতক শিশুর যত্ন


 


জন্মের পরপর


নবজাতক শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো,নবজাতককে গরম রাখা,নবজাতকের গোসল,নাভির যত্ন,চোখের যত্ন,ত্বকের যত্ন,সময়মতো টিকা দেওয়া


নবজাতককে মুছানো


* পরিষ্কার এক টুকরা বড় কাপড়ের ওপর শিশুকে নিতে হবে।


* কাপড় দিয়ে নবজাতকের সারা শরীর জড়িয়ে ফেলতে হব


* কাপড় দিয়ে নবজাতকের মাথা ভালোভাবে মুছতে হবে


* এরপর নবজাতকের গলা, ঘাড় ও কাঁধ ভালোভাবে মুছতে হবে


* এভাবে বুক, পেট ও হাত ভালোভাবে মুছতে হবে


* এরপর নবজাতকের পিঠ ভালোভাবে মুছতে হবে


* নবজাতকের কোমর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত ভালোভাবে মুছতে হবে


* একই নিয়মে মাথা থেকে পা পর্যন্ত আরো কয়েকবার মুছতে হবে


* মোছা শেষে কাপড়টি ফেলে দিতে হবে


* মোড়ানোর জন্য শুকনো ও পরিষ্কার এক টুকরো বড় সুতি কাপড়ের ওপর নবজাতককে নিতে হবে।


* লক্ষ রাখতে হবে, যাতে কাপড়ের কিছু অংশ নবজাতকের মাথার ওপরের দিকে ও কিছু অংশ পায়ের নিচের দিকে বাড়তি থাকে।


* প্রথমে মাথার ওপরের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের মাথা কপাল পর্যন্ত ঢেকে নিতে হবে। কাপড়ের ওপরের দুই কোনা নবজাতকের দুই কাঁধের ওপর এসে কাঁধ ঢেকে দেবে।


* এবার পায়ের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের পা ঢেকে দিতে হবে।


* এবার নবজাতকের শরীরের দুই পাশের বাড়তি কাপড় দিয়ে বুক ও পেট ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।


* পুরোপুরি মোড়ানোর পর শিশুকে গরম রাখার জন্য মায়ের বুকে দিতে হবে।


* এরপর শালদুধ খাওয়াতে সহায়তা করুন।


যে সব সমস্যা হতে পারে


* জন্মের পরপর শ্বাস না নেওয়া


* জন্মের পর না কাঁদা


* খিঁচুনি হওয়া


* অজ্ঞান হয়ে যাওয়া


* শ্বাস নিতে বা ছাড়তে কষ্ট হওয়া


* শরীরের তাপ বেড়ে যাওয়া


* শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া


* শরীর হলুদ রঙের হয়ে যাওয়া


* নাভি লাল, নাভিতে দুর্গন্ধ বা পুঁজ থাকা


* চামড়ায় ঘা, ফোসকা বা পুঁজসহ বড় দানা-লাল ও ফোলা থাকলে


* অনবরত বমি


* নেতিয়ে পড়লে বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করলে


* দুর্বল, অনিয়মিত কাঁদা বা কাঁদতে না পারলে।



নবজাতকের জন্ডিস বলতে আমরা কী বুঝি


জন্ডিস কী আগে এই বিষয়টি বুঝি। আমাদের শরীরে যে রক্ত হয়, প্রতিনিয়ত সে রক্তটা ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে গিয়ে নতুন রক্ত তৈরি হয়। এখান থেকে বিলুরুবিন বের হয়। এর রংটা হলুদ। এর পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখনই জন্ডিস হয়। নবজাতকের যখন এটি হয়, তখন আমরা একে নবজাতকের জন্ডিস বলি।


নবজাতকের জন্ডিস কেন হয়- এই বিষয়ে বলি, অনেকে মনে করে, এটি হয়তো খারাপ কিছু। জন্ডিস বললে সবাই একটু ভয় পেয়ে যায়। বড় বাচ্চাদের যে জন্ডিস সেটা সাধারণত সংক্রমণের কারণে হয়। তবে নবজাতকের জন্ডিস খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। মায়ের পেটে থাকাকালীন শরীরে যে বেশি পরিমাণে রক্ত থাকে, লাল রক্ত কণিকা, সেটা ডেলিভারি (প্রসব) হওয়ার পর আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে বিলুরুবিনটা বের হয়ে আসতে থাকে। এরপর আমাদের লিভার একে প্রসেসিং (প্রক্রিয়াজাত) করে সলিউবল (দ্রবণীয়) করে প্রস্রাব পায়খানা দিয়ে বের করে দেয়। এতে জন্ডিস কমে যায়।


কিন্তু নবজাতক যারা, তাদের এই জন্ডিস সামলানোর শক্তি কম থাকে। কারণ, তার লিভার অপরিপক্ব থাকে। এর জন্য সে সবটুকু বের করতে পারে না। তখনই তার জন্ডিস বৃদ্ধি পায়।


নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার লক্ষণ কী-নবজাতকের স্বাভাবিক যে জন্ডিস সেটির ক্ষেত্রে দেখা যাবে তিন থেকে চার দিন পর শরীর হলুদ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে চেহারা হলুদ হয়ে যাবে, এরপর হাতে, পায়ে হলুদ আসবে, বুক ও পেটে হলুদ হবে। সর্বশেষে পায়ের তলায় এবং হাতের তালু হলুদ হয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রস্রাবও হলুদ হয়ে যাবে। এটা দিয়ে বোঝা যাবে। এ ছাড়া কিছু অপ্রচলিত কারণও রয়েছে।


বিলুরুবিন বেশি তৈরি হলে জন্ডিসের মাত্রাটাও বেশি হয়। এর জন্য কিছু কারণ রয়েছে। বাচ্চা যদি জন্মের পর মায়ের দুধ কম পায়, বেশি খেতে পারে না অথবা মা যদি বাচ্চাকে বেশি দুধ দিতে না পারে বা দুধ যদি কম আসে- সেই সব ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চার জন্ডিস বৃদ্ধি পায়। সেই জন্ডিস সাধারণত দুই থেকে তিনদিনে বৃদ্ধি পেয়ে ছয়-সাতদিনের দিকে কমে যাবে।


আর কিছু কিছু মায়ের দুধে এমন একটি উপাদান আছে, যেটা বিলুরুবিনকে লিভার দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বের করে দেওয়ার ক্ষমতাকে বাধা দেয়। এতে শিশুর জন্ডিস বেড়ে যায়।


আরেকটি বিষয় যেমন মায়ের যদি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ থাকে আর শিশুর যদি পজিটিভ রক্তের গ্রুপ হয়, সেই ক্ষেত্রেও জন্ডিস বেড়ে যাবে। আর মা যদি ও পজিটিভ থাকে, শিশু যদি এ বা বি পজিটিভ থাকে, সেই ক্ষেত্রেও জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে যাবে।


আর একটি বিষয় রয়েছে প্রসব যদি জটিল হয়, যেমন হয়তো শিশু মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে, যেমন ক্যাফোলোহেমাটোমা-এটা খুব প্রচলিত একটি বিষয়। এর কোনো চিকিৎসা লাগে না। কিন্তু পরে শিশুর জন্ডিস হতে পারে। এই জিনিসগুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আরো কিছু অপ্রচলিত কারণ আছে সেগুলো দেখতে হবে।


এখন কখন বোঝা যাবে জন্ডিসটা জটিল অবস্থা। কিন্তু যদি এটা নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, এতে দেখা যায় শিশুর মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়ে যায়। এই জিনিসটা যেন না হয় সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আমরা যখন শুধু মুখে সমস্যাটি দেখব, তখন বুঝব এটি খুব বেশি বাড়েনি। কিন্তু বুকে আর পেটে যদি চলে আসে, তখন বুঝব একটু সামান্য পরিমাণে বেড়েছে, তাও সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু যদি দেখি পায়ের তলায় বা  হাতের তালুতে এসেছে, তখন বুঝতে হবে এটি অনেক বেশি। এটা বোঝার একটি উপায় আছে। আমরা যদি শিশুর ত্বকে বা কপালে একটু চাপ দেই, তখন হাত সরিয়ে দিলে সেখানে হলুদ রং দেখা দেয়। এটা জেনে রাখাটা খুব জরুরি। তাহলে সে হয়তো চিকিৎসা নিতে পারবে। শিশুর জন্ডিসের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে খুব ক্ষতি হয়। এটা কিন্তু স্থায়ী ক্ষতি। হয়তো এখন কিছু বোঝা যাবে না, তবে পরে দেখা যাবে শিশুর বুদ্ধি কম হচ্ছে, অথবা কানে কম শোনা- এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।



নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়


 


বুকের দুধ খাওয়ানোঃ  

কোনো অবস্থায়ই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা যাবে না। শিশুকে নিয়মিত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হচ্ছে শিশুকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ানো।  


রোদ চিকিৎসা বা আলো চিকিৎসাঃ  

বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণত শিশুকে ফটোথেরাপি বা আলোক চিকিৎসা দেয়া হয়। এর উপকারিতা ও কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ থাকলেও এখন পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে নবজাতককে আধা ঘণ্টা রোদ পোহাতেও বলা হয়। তবে সূর্যের কড়া রোদ ও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।   


কখন সতর্ক হবেনঃ  

স্বাভাবিক জন্ডিস সাত দিনের মধ্যেই সেরে ওঠার কথা। এর পরও কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জন্ডিস দেখা দিলে, সাত বা দশ দিনের পরও না সারলে, শিশু খাওয়া বন্ধ করে দিলে বা কমিয়ে দিলে, জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে, বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকলে বা আগের শিশু জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকলে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করুন।


শিশুর গোসলঃ


নবজাতকের নাভী শুকনোর আগে পরিপূর্ণ গোসল করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে এসময় কাপড় বা স্পঞ্জ ভিজিয়ে শিশুর শরীর মোছানো যেতে পারে।


ঘর ঠান্ডা থাকলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে নিতে হবে এবং বাথটাবে প্রায় ৯০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার গরম পানি এমনভাবে ঢালতে হবে যাতে পানি বাথটাবের ভেতরে এক বা দুই ইঞ্চি উঁচু থাকে।


গোসলের জন্য একটি বাথটাব, কয়েকটি ধোয়ামোছার জন্য কাপড়, তুলার প্যাড, শিশুদের জন্য তৈরী সাবান, একটি তোয়ালে এবং একটি নতুন ডায়াপার সংগ্রহ করতে হবে।


শিশুর জামাকাপড় খুলে, মাথা এবং ঘাড় আপনার এক হাতের উপর রেখে ধরে ধীরে ধীরে তার শরীরের পেছনের অংশ বাথটাবে রাখতে হবে।


গোসল আরামদায়ক রাখার জন্য আলতো করে মগভর্তি হালকা গরম পানি শিশুর শরীরের উপর ঢালতে হবে যাতে সে ঠান্ডা অনুভব না করে।


প্রথমেই মনে রাখতে হবে বাচ্চাকে প্রথমবার পানির সংস্পর্শে আনা হচ্ছে। তাই সে কিছুটা অসুবিধা বোধ করতেই পারে। অনেক নবজাতকই এ সময় কেঁদে উঠে। বাচ্চাকে তাই ধীরে ধীরে পানির সংস্পর্শে আনুন। হঠাত্ করে তার গায়ে পানি দেয়া যাবেনা। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চা পানির সাথে মানিয়ে নিবে। তবে বেশি কান্না করলে পানি থেকে উঠিয়ে নি্তে হবে নবজাতককে।


শিশুর মুখমন্ডল এবং শরীর পরিস্কার করার জন্য কাপড়, তুলার প্যাড অথবা আপনার হাত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এজন্য অধিক সাবান ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। আস্তে করে শিশুকে বাথটাব থেকে তুলে নিয়ে একটি তোয়ালে দিয়ে তার শরীরকে মোড়াতে হবে যাতে ভেজা শরীর সহজে শুকিয়ে করা যায়। সাবধান ভেজা অবস্থায় শিশুদের শরীর অনেক পিচ্ছিল হয়ে থাকে।


নবজাতকের গোসলের আগে খেয়াল রাখতে হবে যে বাচ্চার নাড়ি যদি কাঁচা থাকে তবে তাতে পানি না লাগানোই ভালো হবে। পানি লাগলে অনেক সময় সেখানে ঘা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নবজাতকের নাড়ি শুকিয়ে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত নবজাতককে গোসল না দিলেও ক্ষতি নেই। এমন ক্ষেত্রে নবজাতকের শরীর সাবধানে স্পঞ্জ করে দেওয়া যেতে পারে।


একবার নাড়ি শুকিয়ে গেলে তারপর বাচ্চাকে গোসল দেওয়া যাবে। নবজাতককে গরমের সময় সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার গোসল করানো যেতে পারে যেন বাচ্চা সুস্থ ও ভালো থাকে।


বাচ্চাকে গোসল করানোর জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। কখনোই স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।



নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়  এবং নবজাতকের যত্নে করণীয়

নবজাতক শিশুর মায়ের খাবার


যে অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করে একজন মা সন্তানের জন্ম দেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্তান জন্মানের পরও তাদের কষ্ট আর ত্যাগ ফুরিয়ে যায় না। তাই প্রসবের পরেও মায়েদের সঠিক খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও বুকের দুধ তৈরি করার জন্য মাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ সব ধরণের খাবার খেতে হবে। প্রসব-পরবর্তীতে মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ৭৫০ ক্যালরি খাবার বেশি খাওয়া দরকার। নবজাতকের মায়ের নিজের দেহের ক্ষয়পূরণ ও বুকে দুধ উত্পাদনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এসময় প্রায় ২৬ গ্রাম বেশি আমিষ প্রয়োজন হয়। এজন্য নবজাতকের  মাকে প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবার যথা-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। সাধারণত নবজাতকের  মায়ের বুকে দৈনিক ২০-৩০ আউন্স দুধ তৈরি হয়। ২ গ্রাম খাদ্য প্রোটিন থেকে ১ গ্রাম দুধের প্রোটিন তৈরি হয়। এটি তখনই সম্ভব মায়েরা যদি দৈনিক ১০০ গ্রাম প্রোটিনের মধ্যে অর্ধেক বা দু-তৃতীয়াংশ প্রাণিজ প্রোটিন যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করেন। প্রাণিজ প্রোটিন মায়ের দুধের উত্কৃষ্ট উপাদান।


 


একজন মা যিনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, স্বাভাবিক খাবারের পর যেটুকু বেশি খাবারের প্রয়োজন তার তালিকা এখানে দেওয়া হলো। এই তালিকার সাথে ২ বেলা একটু বেশি নাস্তা খেলে অতিরিক্ত ৭৫০ কিলো ক্যালরি পাওয়া যাবে। নিম্নলিখিত খাদ্য উপাদানগুলোতে কি পরিমাণ ক্যালো-ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় তা উল্লেখ করা হলো:ভাত ২ কাপ বা ২টি রুটিতে আছে ১৬২ কিলো ক্যালোরি/শক্তি, ডাল ১ কাপে আছে ১২০ কিলো ক্যালোরি/ শক্তি, সবজি ১ কাপ (হাফ করে দুই প্রকার) আছে ৩৫ কিলো ক্যালরি/ শক্তি, শাক ১/২ কাপে আছে ২০ কিলো ক্যালরি/শক্তি, তেল ১.৫ চামচ-এ আছে ৬৭ কিলো ক্যালরি/শক্তি, মাছ/মাংস/ডিম ২ টুকরা বা ১টা ডিমে আছে ৮৫ কিলো ক্যালরি/শক্তি, ৫টি মৌসুমি ফল বা কলা ১টা করে ১০০ কিলো ক্যালোরি/শক্তি পাওয়া যাবে।      


 

সাধারণভাবে  আমরা বলি মা যা খেতেন তার চেয়ে এক মুঠো ভাত বেশি খাবেন। নবজাতকের মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি নবজাতকের মায়ের খাবার নিয়ে


কুসংস্কারও দূর করতে হবে। ঝাল খেলে বাচ্চার পেটের ভীষণ সমস্যা হয়, ঠান্ডা খেলে বাচ্চারও ঠান্ডা লাগে, বেগুন চিংড়ি খেলে বাচ্চার অ্যালার্জি হতে পারে আর টক তো খাওয়াই যাবে না, এতে যে  সন্তানের  বুদ্ধি কমে! প্রকৃতপক্ষে এসব বিধিনিষেধের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু খাবার আছে যা অবশ্যই মায়েদের এড়িয়ে চলা উচিত যেমন - অতিরিক্ত লবণ, ভাজাপোড়া,কৃত্রিম রঙ, বাসি ও নষ্ট খাবার, অ্যালকোহল, ধূমপান ইত্যাদি। মায়েরা কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংস খাবেন না। ছত্রাক পড়া পনির, অপাস্তুরিত দুধ,  কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম এড়িয়ে চলুন। আগে বাচ্চার এলার্জি হওয়ার ভয়ে মাকে বেগুন, চিংড়ি, চীনা বাদাম খেতে নিষেধ করা হতো কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের এসব খাওয়ার সঙ্গে শিশুর এলার্জি হওয়ার কোনোই যোগসাজশ নেই।


মা উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন খেলে  শিশুর অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বলে ক্যাফেইন খাওয়া সমপূর্ণ বন্ধ করতে হবে না, দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বা এক কাপের   বেশি ক্যাফেইন না খেলেই হলো। ওষুধ অনেক ওষুধ বুকের দুধ কমিয়ে দেয়, আবার নবজাতকের ক্ষতি করতে পারে তাই মায়েদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। বস্তুত পক্ষে নবজাতকের মায়েরা কিছু খাবার এড়িয়ে চলবেন তো অবশ্যই কিন্তু যেগুলো খেতে নিষেধ নেই সেগুলো বেশি করে খেতে হবে। মায়ের নিজের জন্য এবং শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্যই এটা করতে হবে। এই জন্য পরিবারের সবার উচিত মায়ের একটু বেশি যত্ন নেয়া।




বুকের দুধ নাকি ফর্মূলা


নবাগত শিশুর জন্য ভালো প্রাকৃতিক খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। শিশু জন্মের পর প্রথম ছয় মাস তাকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা। বুকের দুধ শিশুর পরিপূর্ণ পুষ্টির চাহিদার জোগান দেয়। তবে সঠিক নিয়মে বুকের দুধ খাওয়ানো অনেক জরুরি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম।


জন্মের পরপর শিশুকে খুব দ্রুত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। কেননা জন্মের পর প্রথম আধা ঘণ্টা শিশুর বুকের দুধ টেনে নেওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে। এ সময়ে বেটা ক্যারোটিন-সমৃদ্ধ যে শাল দুধ বের হয়, তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

দুধ খাওয়ানোর সময় নিশ্চিত করুন শিশুর অঙ্গবিন্যাস এবং অবস্থা ঠিক আছে কি না। স্তন পান করানো একটি ব্যথাহীন অভিজ্ঞতা। যদি দুধ খাওয়ানোর সময় স্তনে কোনো ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখ মায়ের স্তনের বোঁটা বা কালো অংশের বেশির ভাগ জুড়ে থাকবে এবং ঠোঁট বাইরের দিকে থাকবে। শিশু যদি প্রথম দিকে দুধ না খেতে চায়, তাহলে প্রয়োজনে মা হাত দিয়ে চেপে সামান্য দুধ শিশুর ঠোঁটে দিতে পারেন। বোঁটার ছোঁয়া শিশুর মুখে লাগলে দুধ খুঁজতে হাঁ করবে। তবে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না, মুখ বেশ খানিকটা হাঁ হলেই খেতে দিতে হবে।

বুকের দুধ শিশুর জন্য সঠিক খাবার। এতে শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত এবং পরিমিত পুষ্টি রয়েছে; রয়েছে রোগ প্রতিরোধক উপাদান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরপর শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে ভালো হয়। এর ফলে শিশুর দুধ টানার অভ্যাস চালু হয়।

দুধ খাওয়ানোর সময় বোঁটার ওপর খেয়াল রাখুন। শিশুর ত্বক নরম এবং নমনীয় আছে কি না, শিশুর শরীরের তাপ স্বাভাবিক আছে কিনা এগুলো ভালোভাবে খেয়াল করুন। এসব সঠিকভাবে দুধ খাওয়ানোর চিহ্ন।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হলে মাকে স্তনের প্রতি ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে। প্রত্যেকবার দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন ম্যাসাজ করে নেবেন। আলতো করে স্তনের কালো অংশের পেছনে ম্যাসেজ করবেন। খাওয়ানোর পরও ম্যাসেজ করুন।

যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাঁদের প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ১২ থেকে ১৫ শতাংশ প্রোটিন, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ চর্বি খেতে হবে।


নবজাতক শিশুর ওজন


ভালো ভাবে পরিপুষ্ট মায়েদের ক্ষেত্রে শিশুর ওজন জন্মের সময় সাধারণত ৩.৫ কেজি হয়। কিন্তু ভারতীয় শিশুদের জন্মের সময় ওজন গড়ে ২.৭ থেকে ২.৯ কেজি হয়ে থাকে। জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুর ওজন রেকর্ড করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিমাপ শিশুর বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে।


জন্মের সময় ২.৫ কেজির কম (২.৪৯৯ পর্যন্ত এবং সহ) ওজন আন্তর্জাতিক ভাবে নিম্ন জন্ম-ওজন (লো বার্থ ওয়েট সংক্ষেপে এলবিডাবলু) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। জন্ম পরবর্তী কোনও ক্ষতি ঘটার আগেই শিশুর জীবনের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে তার ওজন পরিমাপ করা জরুরি। শিশুর পূর্ণ মেয়াদের পর বা মেয়াদের আগে জন্ম হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে নিম্ন জন্ম-ওজনের পরিমাপ দু’রকম হয় ---


মেয়াদের পূর্বে জন্ম : অকালে বা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অর্থাৎ গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ আগে জন্ম হয় যে শিশুদের, জরায়ুতে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে, যেমন, ওজন, দৈর্ঘ্য ও বৃদ্ধি স্বাভাবিক। এই শিশুদের জন্মের সময় থেকে ২ থেকে ৩ বছর বয়স পর্যন্ত সঠিক যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। উন্নত দেশে, নিম্ন জন্ম-ওজনের শিশু হল নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্মানো শিশু। এর কারণ, একাধিক বার গর্ভধারণ, গুরুতর সংক্রমণ, টক্সিমিয়া, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, কঠিন শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি কারণে এবং অনেক ক্ষেত্রে কারণ অজানা।

স্মল ফর ডেট (এসএফডি): এই ধরনের শিশু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময় বা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্মগ্রহণ করতে পারে। তাদের ওজন /নির্ধারিত সময়ের বয়সের ১০ শতাংশের কম হতে পারে। এটি সংশ্লিষ্ট ভ্রূণের বৃদ্ধি সঙ্গে জড়িত।ন্নয়নশীল দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুদের জন্মের সময় কম ওজন হয় এসএফডি-র কারণে। এই জন্ম-ওজন কমের অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, মায়ের অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, একাধিক গর্ভধারণ, উচ্চ রক্তচাপ, টক্সিমিয়া এবং ম্যালেরিয়া। অধিকাংশ কারণের পিছনে সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা ও শিক্ষাগত অবস্থান জড়িত। ভ্রূণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি হল : একাধিক গর্ভধারণ (দু’টি অথবা তিনটি শিশু) জরায়ুস্থ সংক্রমণ, অস্বাভাবিকতা এবং ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতা। ডিম্বকবাহী গভর্পত্র সংক্রান্ত কারণের মধ্যে রয়েছে এর অস্বাভাবিকতা এবং গুণগত ভাবে উন্নত ডিমের অপ্রতুলতা।





নবজাতকের জ্বর হলে করণীয়


 


জ্বর এর কারন ও লক্ষনঃ


ভাইরাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে সাধারণত জ্বর হয়। জ্বর হল একটা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যা শিশুকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। জ্বর যে কারণেই হোক, জ্বরের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। জ্বরের চিকিৎসার সঙ্গে আসল রোগ নির্ণয় করে তার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। পাশাপাশি শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে।



জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন-


  • শিশু একটু বেশি কান্না করতে পারে।
  • সর্দি, কাশি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  • খাওয়ার প্রতি রুচি কমে যেতে পারে।
  • জোর করে খাওয়াতে গেলে বমি করতে পারে।
  • দেহের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে শিশু জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়তে পারে, আজেবাজে বকতে পারে।
  • ঘুম নষ্ট হতে পারে, অনর্থক ঘুম থেকে জেগে চিৎকার করতে পারে।
  • অনেক সময় শিশুর খিচুনিও হতে পারে।


 


প্রতিকারঃ 


সঠিকভাবে তাপমাত্রা পরিমাপ :

ছোট শিশুদের তাপমাত্রা বগলের নিচে বা কুচকির মাঝে মাপুন। কখনোই ছোট শিশুদের মুখে থার্মোমিটার দেবেন না। কারণ তারা কামড় দিয়ে থার্মোমিটার ভেঙে ফেলতে পারে, ফলে মুখের ভেতর কেটে যেতে পারে। বড় শিশুদের মুখে জিহ্বার নিচে অথবা বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপতে পারেন। কাচ পারদ থার্মোমিটার ব্যবহারের আগে ঝাঁকিয়ে পারদ স্তর নামিয়ে দিয়ে বগলের নিচে কুচকির মাঝে অথবা মুখে তিন মিনিট ধরে রাখতে হবে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে দ্রুত ও সঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপা যায় এবং কাচ পারদ থার্মোমিটারের চেয়ে নিরাপদ। যদি শিশুর তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তাহলে বুঝবেন শিশুর জ্বর হয়েছে।


 

শিশুকে হালকা পোশাক পরান :

জ্বর হলেই ঠাণ্ডা লাগবে- এ ধারণাটা ঠিক নয়। তাই একগাদা কাপড় কাঁথা দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে রাখা যাবে না। কারণ এতে জ্বর বাড়বে ছাড়া কমবে না। জ্বর হলে শিশুর গায়ে হালকা কাপড় রাখুন, জ্বর বেশি হলে শিশুর সব জামা-কাপড় খুলে দিন। জ্বর কমতে সহায়তার জন্য ঘরের জানালা-দরোজা খোলা রাখুন। ফ্যান হালকা করে ছেড়ে রাখুন বা হাতপাখা দিয়ে শিশুর সমস্ত শরীরে বাতাস করুন। শিশুর জ্বর কমে যাওয়ার পর সঙ্গে তার গায়ে হালকা-পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। শীত বোধ হলে চাদর বা কাঁথা গায়ে দিয়ে দিতে পারেন।


 


শিশুকে স্পঞ্জবাথ করান :

জ্বর কমানোর জন্য শিশুর শরীরে স্পঞ্জ করে দেয়া উচিত। স্পঞ্জ করার জন্য গরমকালে স্বাভাবিক পানি আর শীতকালে ঈষৎ উষ্ণ পানির ব্যবহার করা ভালো। বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করাই ভালো, এতে শিশুর কাঁপুনি উঠে যেতে পারে। পানি শরীর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। এ ছাড়াও স্পঞ্জ করার পর দেহের লোমকূপগুলো খুলে যায় এবং সহজেই দেহের তাপমাত্রা বাইরে তাপমাত্রার সমান হতে চেষ্টা করে, যার ফলে জ্বর কমে যায়। স্পঞ্জ করার জন্য একটি পরিষ্কার তোয়ালে, গামছা বা সুতির কাপড় নিন। কাপড়টি পানিতে ভিজিয়ে বেশিরভাগ পানি নিংড়ে ফেলে দিন। তারপর এই ভেজা কাপড় দিয়ে প্রথমে কপাল, মুখ পরে এক এক করে হাত, পা, শরীর, ভালো করে মুছে দিতে হবে। 


 


শিশুকে প্রচুর তরল খাওয়ান :

জ্বরের সময় শিশুকে দৈনন্দিন চাহিদার পরও শতকরা পাঁচ থেকে সাত ভাগ পানি বেশি দিতে হবে। এর সঙ্গে যদি আবার বমি বা পাতলা পায়খানা থাকে, তবে চাহিদার সঙ্গে বমি এবং পাতলা পায়খানার জন্য যতটুকু পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে, ততটুকু যোগ করতে হবে। তা না হলে দেহে পানির অভাব দেখা দেবে, যা শিশুর জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।





শিশুকে ঘরে রাখুন :

শিশুর যতদিন জ্বর থাকে ততদিন তাকে বাইরে বেড়াতে না দিয়ে ঘরের মধ্যে রাখা সবচেয়ে ভালো।অসুখ ভালো হওয়ার জন্য চিকিৎসক যে মাত্রায় যতদিন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন ঠিক ততদিনই তা সেবন করা উচিত; অন্যথায় সাময়িকভাবে জ্বর ভালো হয়ে গেলেও কিছু দিন পরে শিশুর আবার জ্বর হতে পারে।




জ্বর ও খিঁচুনি :

জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি অল্প বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। এ ধরনের খিঁচুনি সাধারণত জ্বরের প্রথম দিনেই হয়ে থাকে। জ্বর আসার পরের দিনও খিঁচুনি হতে পারে। শিশুদের জ্বর অত্যাধিক হলে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শিশুর খিঁচুনি শুরু হয় এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে পড়তে পারে। এই খিঁচুনি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। যা পরে শিশুর জন্য কিছু সমস্যা হয়ে থাকে।



শিশুর সঠিক বিকাশে করনীয়


মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় নিউরন নামক মস্তিষ্কের কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবার, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা গর্ভস্থ শিশুর নিউরনের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। জন্মের পর এ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় না, তবে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক উদ্দীপনার দ্বারা নিউরন গুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটে এবং সেগুলো সক্রিয়হয়। এ জন্য শিশু যাতে তার পাঁচটি ইন্দ্রিয় প্রতিদিন বারবার ব্যবহারের সুযোগ পায়, তার দিকে যত্নবান হতে হবে। এতে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ ঘটবে এবং বারবার ব্যবহৃত সংযোগ গুলো স্থায়ী হয়ে শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকবে। শিশুর প্রথম জীবনে এ ধরনের বিকাশের জন্য মা-বাবা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বিশেষ ভূমিকা প্রয়োজন।


নিচের বিষয় গুলো নিশ্চিত করতে পারলে একটি শিশু সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ লাভ করবে


  • গর্ভাবস্থায় মায়ের সুষম খাবার, শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। নিরাপদ প্রসব ও প্রসব-উত্তর পর্যাপ্ত যতের ব্যবস্থা করা।

  • শিশুর জন্মের পরপর শাল দুধ, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ এবং পরে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার দেয়া।

  • শিশুকে প্রচলিত সাতটি রোগের টিকা প্রদান এবং অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

  • বুকের দুধ খাওয়ানো কিংবা দৈনন্দিন কাজের সময় শিশুর দিকে তাকিয়ে কথা বলা, মৃদু স্বরে গান গাওয়া, দিনের কিছু সময় মৃদু শব্দে শিশুকে উদ্দীপ্ত করা।

  • শিশুর সাথে লুকোচুরি সহ বিভিন্ন ধরনের আনন্দময় খেলাধুলা করা। হাত-পা নেড়ে হালকা ব্যায়াম করানো এবং সাথে আনন্দসূচক শব্দ করে কথা বলা। গান, ছড়া ওমজার মজার গল্প করে শিশুকে সক্রিয়া করা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.