হরতকীর গুণাবলী ও বিভিন্ন রোগে হরতকীর ব্যাবহার। সুস্থ থাকুন সবসময় By Healthybangaly

রোগ নিরাময়ে হরতকীর উপকারীতা


হরতকীর গুণাবলী ও বিভিন্ন রোগে হরতকীর ব্যাবহার 


হরতকীর গুণাবলী ও বিভিন্ন রোগে হরতকীর ব্যাবহার


হরতকী বললেই ত্রিফলার কথা মনে আসে। ত্রিফলা মানে তিনটি ফলের মিশ্রণ। এই তিনটি ফল হলো- আমলকী, হরতকী ও বহেড়া। তবে তিনটি ফলের মধ্যে হরতকীর রয়েছে অসাধারণ গুণ। হরতকী পাকা ধরলে হলুদাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং মুখে চিবালে যদিও তিতে তিতে লাগে তবুও হরতকীর কোনো কিছু ফেলনা নয়। বীজের ভেতরের শাঁসও মজা করে খাওয়া যায়। হরতকী ভেষজ গুণসমৃদ্ধ, আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও কলেরা ও আমাশয় নিরাময়ে এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। হরতকী চূর্ণ, ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিত্তশূল দূর হয়, বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম, ক্ষত, কনজাংটিভাইটিস রোগেও হরতকী ব্যবহৃত হয়। হরতকীর কাঠ খুবই শক্ত এবং টেকসই। গৃহনির্মাণ এমনকি সুদৃশ্য আসবাবপত্র তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গুণাগুণের কারণে বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় নিম গাছের পাশাপাশি মানুষ হরতকীর গাছ লাগায়। এমনকি সরকারও বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রাস্তার পাশে হরতকী রোপণে মনোনিবেশ করেছে।

হরতকীর গুণাবলিঃ-

আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞানে ত্রিফলা নামে পরিচিত তিনটি ফলের একটি হরতকী। এর নানা গুণ আছে। স্বাদ তিতা, এটি ট্যানিন, অ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ ও বিটা সাইটোস্টেরল-সমৃদ্ধ একটি ফল।

হরতকীর ব্যবহারঃ-

হরতকী দেহের অন্ত্র পরিষ্কার করে এবং একই সঙ্গে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এটা রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। এটা রেচক, কষাকারক,পিচ্ছিলকারক,পরজীবীনাশক,পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরতকীতে অ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হরতকী। অ্যালার্জি দূর করতে হরতকী বিশেষ উপকারী। হরতকী ফুটিয়ে সেই পানি খেলে অ্যালার্জি কমে যায়। হরতকীর গুঁড়া নারিকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাথায় লাগালে চুল ভালো থাকবে। হরতকীর গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। গলা ব্যথা বা মুখ ফুলে গেলে হরতকী পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে আরাম পাবেন। দাঁতে ব্যথা হলে হরতকী গুঁড়া লাগান, ব্যথা দূর হবে। রাতে শোয়ার আগে অল্প বিট নুনের সঙ্গে ২ গ্রাম লবঙ্গ বা দারুচিনির সঙ্গে হরতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খান পেট পরিষ্কার হবে।

হরতকীর ৭টি আর্চশ্য গুণাবলী 


হরতকীর গুণাবলী ও বিভিন্ন রোগে হরতকীর ব্যাবহার

১। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পেট ফাঁপায় -
৫ থেকে ৬ গ্রাম হরতকীর খোসাচূর্ণ সামান্য পরিমান বিট লবণ বা কালো লবণ মিশিয়ে আহারের পর দিনে ৩ বার সেবন করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও পেটফাঁপা কমে যায়।

২। কোষ্ঠ কাঠিন্যে -
৫ থেকে ৬ গ্রাম হরতকীর খোসা চূর্ণকরে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে রাতে গরম পানিসহ সেবন করলে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয়ে যায়।

৩। হিক্কায় -
৫ গ্রাম হরতকীর খোসা চূর্ণকরে গরম পানিসহ দিনে ৩ থেকে ৪ বার সেবন করলে হিক্কা দূর হয়।

৪। শোথরোগে -
৬ গ্রাম হরতকীর খোসা চূর্ণকরে ৫ থেকে ৬ চা চামচ গুলঞ্চের রস সহ দিনে ৩ থেকে ৪ বার সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।

৫। অর্শরোগে -
৩ থেকে ৪ গ্রাম হরতকীর চূর্ণ সমপরিমাণ ঘোলের সাথে একটু সৈন্দব লবণসহ সেবনে অর্শরোগ দূর হয়।

৬। হাঁপানি রোগে -
হরতকীর মোটা চূর্ণ সিগারেটের পাইপে ভরে বা বিড়ির মত পাকিয়ে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া টানলে হাঁপানি রোগ আরোগ্য হয়।

৭। তৃষ্ণা রোগঃ-  এছাড়া ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা কিংবা বমি-বমিভাব কাটাতেও হরতকী ব্যবহৃত হয়। ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, বহেরা, হরতকী- এর প্রতিটির সমপরিমাণ গুঁড়ার শরবত কোলেস্টেরল অর্থাৎ প্রেসার বা রক্তচাপ কমানোর এক মহৌষধ। এক ঔষধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক বিজ্ঞানে ঔষধ তৈরিতে হরতকী ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া ও জ্বর, কাশি, হাঁপানি, পেটফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা, বর্ধিত যকৃত ও প্লীহা, বাতরোগ, মূত্রনালীর অসুখ, ফুসফুস, শ্বাসনালীঘটিত রোগে হরতকী ফলের গুঁড়া ব্যবহৃত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.