নারীদের যোনি নির্গত অতিরিক্ত সাদাস্রাবকেই সাধারণ কথায় আমরা লিউকোরিয়া বলতে বুঝে থাকি । "আধুনিক হোমিওপ্যাথি,তে ট্রিটমেন্ট নিতে আসা রোগীনিদের কেস স্টাডিতে আমরা দেখেছি প্রায় সব মেয়েরদেরই কম বেশি সাদাস্রাব থাকে।
এই সাদাস্রাবে কোনো রক্ত মিশ্রিত থাকবে না। প্রদাহজনিত কারণে কোনো প্রকার দুর্গন্ধ থাকবে না, যোনিপথে বা যোনির মুখে কোনো প্রকার চুলকানি থাকবে না। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সাদাস্রাবের জন্য কাপড় বা আন্ডার অয়ার ভিজা থাকে এবং শুকালে এক ধরনের হলদেটে বা বাদামি দাগ লেগে থাকে। সব সময় ভিজা ভিজা ভাব লাগলে অস্বস্তিবোধ করেন।
লিউকোরিয়া যদিও খুব জটিল কোনো রোগ নয় কিন্তু অনেক দিন ভুগতে থাকলে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে। নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় অর্থাৎ বয়সের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সাদাস্রাবের সমস্যা হতেই পারে। ১৪-৪২ বছর বয়সী স্ত্রীলোকের শরীরে স্ত্রী হরমোন বেশি থাকে যে জন্য যোনি কোষস্তর মোটা থাকে।
যোনিতে ব্যাসিলাই নামক এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা যোনির মৃত কোষের ভেতর গ্লাইকোজেনকে ল্যাকটিক এসিডে রূপান্তরিত করে। এই ল্যাকটিক এসিড যোনিপথকে ভেজা রাখতে সাহায্য করে এবং যোনির পিএইচ বজায় রেখে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মেয়ে বাচ্চা জন্মের প্রথম দশদিন বাচ্চার যোনিপথে আঠালো সাদাস্রাব বের হতে থাকে। এটা দেখে ভয়ের কিছু নেই। এর কারণ হলো গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে স্ত্রী হরমোন আধিক্য থাকায় সেটা গর্ভফুল দিয়ে কন্যা শিশুর শরীরে প্রভাব ফেলে।মিনারকি বা প্রথম মাসিক হওয়ার আগে বা মাসিক শেষে অতিরিক্ত সাদাস্রাব হতে পারে।
সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার ৩-৪ দিন আগে এবং পিরিয়ড শেষে কয়েক দিন লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
সাধারণত নিয়মিত মাসিকের ২ সপ্তাহ পর বা ১৪ দিনের মাথায় যখন ওভিউলিশন হয় অর্থাৎ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু নির্গমন হয় তখন তলপেট ব্যথাসহ লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলে অতিরিক্ত সাদাস্রাব হতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে স্ত্রী হরমোন অধিক মাত্রায় থাকলে লিউকোরিয়া দেখা দেয়।
সন্তান প্রসবের দেড় মাস থেকে ৩-৪ মাস পর্যন্ত লিউকোরিয়া থাকতে পারে। অত্যধিক যৌন উত্তেজনা বা আবেগেও লিউকোরিয়া হতে পারে।
যৌবনের শুরুতে প্রজনন অঙ্গে রক্ত চলাচল বেশি হওয়ার জন্যও সাদাস্রাব বেশি হয়ে থাকে।
পুষ্টিহীনতা এবং অত্যধিক মানসিক চাপের কারণেও সাদাস্রাব হতে পারে।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন :-
যোনিতে চুলকানি
যদি সাদাস্রাব খুব ঘন ও দুর্গন্ধযুক্ত এবং চুলকানি থাকে তবে বুঝতে হবে জরায়ুর মুখে বা যোনিপথে সংক্রমণ হয়েছে। এ সংক্রমণের জন্য ছত্রাক বা পরজীবী (ট্রাইকোমোনাস) বেশি দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব হয়ে থাকে। তলপেটে এবং যোনিপথে ব্যথা এবং জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে এবং দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রমণ হয় এবং অতিরিক্ত সাদাস্রাব হয়। জরায়ুর মুখে দীর্ঘদিনের ইনফেকশন, ইরোশন থেকেও অতিরিক্ত সাদাস্রাব হয়। পিআইডি বা প্রজনন অঙ্গের ইনফেকশন থাকলে তলপেট, কোমর ব্যথাসহ লিউকোরিয়া হয়।
এসব সমস্যায় অবশ্যই অভিজ্ঞ কোনো হোমিও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ একমাত্র হোমিওতে এর সর্বাধিক কার্যকারী এবং সফল ট্রিটমেন্ট রয়েছে যা সমস্যাটিকে তার মূল থেকে নির্মূল করে দেয়।
সাদাস্রাব এর ঘরোয়া চিকিৎসা
সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে বিশেষ করে কাপড়-চোপড় এবং বাথরুম। আন্ডার গার্মেন্টস পরার আগে ইস্ত্রি করে নিলে আরো ভালো হয়।
পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত স্যানেটারি প্যাড বা ন্যাপকিন পরতে হবে। অপরিষ্কার বা নোংড়া ন্যাপকিন ব্যবহার করলে লিউকোরিয়া এবং অন্যান্য ইনফেকশন বেশি এবং চুলকানির মাত্রা অতিরিক্ত হয়। এ জন্য পিরিয়ডের সময় কাপড়, ন্যাপকিন ইস্ত্রি করে নিলে ইনফেকশনের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়।
যদি দেখা যায় জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার ফলে লিউকোরিয়া হচ্ছে তাহলে আপনার হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং বড়ি বন্ধ করে অন্য ব্যবস্থা নিন।
পুষ্টিহীনতা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য থাকলে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
ইনফেকশনের জন্য অতিরিক্ত সাদাস্রাব হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোনো হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলে খুব তাড়াতাড়িই এই সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বিন্দু মাত্র উপকারে আসে তাহলেই আমার এই লেখালেখি সার্থক হবে ।
সুস্থ থাকুন সব-সময়।